নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৬ বছরে পুঁজিবাজারে তার প্রকৃত মূল্য ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর অবস্থান’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে গতকাল এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন সময়ে অবহেলা এবং বাজার কারসাজির কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বিভিন্ন খাতে সংস্কার করা হচ্ছে। পুঁজিবাজার সংস্কারে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে খুব একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ আছে। তার মধ্যে রয়েছেÑনিম্নমানের আইপিও, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, বিও অ্যাকাউন্টে স্বচ্ছতার অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ও সেকেন্ডারি মার্কেটে কারসাজি। এগুলোর উন্নতি করতে হবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘গত ৯ মাসে ডিএসইতে বিভিন্ন সূচকের ওঠানামা দেখতে পাচ্ছি। ধারাবাহিকভাবে সূচক নিম্নমুখী থেকেছে। খুব দ্রুত তা ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। অভ্যন্তরীণ লেনদেনে কারসাজি অব্যাহত রয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘দুর্বল নজরদারি, প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনাসহ নানা কারণে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
এছাড়া ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন ফাহমিদা খাতুন।
আগামী নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার সময় এসে গেছে বলে মন্তব্য করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তা না হলে কর্মসংস্থান হবে না; প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে। দারিদ্র্য বেড়ে যাবে। এতে বৈষম্যও বাড়বে। তাই এখন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দেয়ার প্রয়োজন। সেটা ডিসেম্বর, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি হোক। বিষয়টি হলো, সুনির্দিষ্ট সময় দেয়া দরকার।’
নির্বাচনের বিষয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলেই বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির জগতে প্রবেশ করবে, তা কিন্তু নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে হবে। ব্যাংকিং খাত, এনবিআরসহ অন্যান্য খাতের সংস্কার হলেই কেবল বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগের জন্য গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তো নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। ডিজিটালাইজেশনের জন্য নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে একদম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গেছে, বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। ইতোমধ্যে ডিসেম্বর কিংবা জুনের সময়সীমা দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ৭ থেকে ১৩ মাসের ভেতরে নির্বাচন হচ্ছে।
দেশের জ্বালানি খাত প্রসঙ্গে সংগঠনটি জানায়, মাসে রান্নাবান্নায় জ্বালানি খরচ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। এটা পারিবারিক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সময় জানানো হয়, জ্বালানি খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ করা হয় সেটা সঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় না। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বৃদ্ধি পারিবারিক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২০২১ সালে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ৯০০ টাকা। ২০২৫ সালে সেই দাম ঠেকেছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। মাত্র কয়েক বছরে এলপিজির দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা। মাসে রান্নাবান্নায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। মূলত দেশে গ্যাস উৎপাদন কমছে, বিদেশ থেকে আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি খাতের অবকাঠামো অনেক পুরোনো হওয়ায় সমস্যাগুলো আরও জটিল হচ্ছে।