গুমবিরোধী পদক্ষেপের প্রশংসা জাতিসংঘের

শেয়ার বিজ ডেস্ক : গুমের ঘটনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (আইসিপিপিইডি)’-এ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছে সংস্থাটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কা ও সদস্য আনা লোরেনা দেলগাদিলো পেরেজের এক বৈঠকে এ প্রশংসা করা হয়।
বৈঠকে ডব্লিউজিইআইডি’র প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। এ সময় গুমবিষয়ক বাস্তব চিত্র ও সরকারি উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করছেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের (সিওআই) কার্যক্রম ও প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।

তারা গুম প্রতিরোধ ও এ-সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে আরও সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, সুরক্ষা এবং গুমের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নে জাতিসংঘের অব্যাহত সমর্থন ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধ-বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এই আইনের অধীনে গুমবিষয়ক একটি শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

সচিবালয়ে জাতিসংঘের গুম-সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের (ওয়ার্কিং গ্রুপ) সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের গতকাল তিনি এ কথা জানান।

পরবর্তী সরকার আইনটি বাতিল করবে কি না-এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যেই সরকারে আসুক, তারা সবাই গুমের শিকার। তারা সবাই এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন আর বিএনপি-জামায়াত তো সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার ছিলেন।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে জাতিসংঘের গুম-সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ বারবার বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, তাদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের একটা কমিটমেন্ট ছিল গুমের তদন্ত ও বিচার করা। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে, আমরা তাদের সঙ্গে আজ মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বসার পর তারা আমাদের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। তারা গুম কমিশনের, তদন্ত কমিশনের প্রশংসা করেছেন, আমরা আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছি, সেটার প্রশংসা করেছেন। তারা গুম-বিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছেন।

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল। এই কমিশন শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও হয়েছে। কিন্তু অতটা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চারটি অংশ থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ট্রুথ সেকিংÑআসলে কী হয়েছিল সেটা। সেটার কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কিছুদিন আগে যে রিপোর্টটা প্রকাশ করল, সেটা এটার একটা পার্ট। আমাদের ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, সেটা ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।’

আসিফ নজরুল আরো বলেন, আমাদের মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী সাবেক গণভবনে যে জুলাই জাদুঘর করছেন, সেটাও ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।

তিনি বলেন, তারপর একটা পার্ট হচ্ছেÑমেমোরিয়ালাইজেশন, স্মৃতিটাকে ধরে রাখা। সেটা মি. ফারুকীর জাদুঘরের মাধ্যমে নিশ্চয়ই করা হবে। আর তৃতীয়টা হচ্ছে অ্যামনেস্টি, এটা একটু কঠিন। এটা হচ্ছে, যারা ছোট ছোট অপরাধে যুক্ত ছিলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, তাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যামনেস্টির স্কোপ আছে কি না সেটা দেখা। সব দেশেই এটা করা হয়।

উপদেষ্টা আরো বলেন, চতুর্থ ধাপ হচ্ছে রিকনসিলিয়েশন। যারা চরম দোষী আছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া। ক্ষতিপূরণ শুধু টাকার অঙ্কে না। ধরেন হয়তো জুলাই অবস্থানে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা অনেক মিটিং করেছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় ধাপে চিন্তা আছে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রিজিওনাল কনফারেন্স করা। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের সেখানে আনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার গ্রুপ ও ছাত্র সমাজÑসবার মতামত নিয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা করা হবে।