এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে শাটডাউনের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণ না করা হলে আগামী শনিবার থেকে দেশের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

চেয়ারম্যানকে ‘আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা’ আখ্যা দিয়ে এবং তার বিরুদ্ধে ‘দেশ ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত’ থাকার অভিযোগ তুলে পরিষদ নতুন এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকায় এনবিআরের সব দপ্তরের সহস্রাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এদিন রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে কলম বিরতি কর্মসূচি। অনেককে কাফনের কাপড় পরে এ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে এই আন্দোলনের মধ্যে রোববার আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।

এর মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআর বোর্ড অফিসের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লার কর অঞ্চলের।

কর প্রশাসনের এক আদেশে বলা হয়, উপ কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে বদলি করে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।

উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলামকে ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ থেকে থেকে খুলনা কর অঞ্চলে এবং উপ কর কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফকে বোর্ড থেকে সরিয়ে বদলি করা হয়েছে বগুড়া কর অঞ্চলে।

এ ছাড়া উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে এবং উপ কর কমিশনার নুসরাত জাহান শমীকে কুমিল্লা কর অঞ্চল থেকে রংপুর কর অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, তাদের নতুন কর্মস্থলে মঙ্গলবার বা তার আগেই যোগ দিতে হবে এবং সোমবার বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

এ আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ দাবি করে ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “সব বদলি আদেশ আজকের (সোমবার) মধ্যে বাতিল না করা হলে আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকাস্থ কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি এবং ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি, কলম বিরতি এবং ‘চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি’ ঘৃণা প্রকাশ চলবে।”

এ ছাড়া এ ধরনের নতুন কোনো বদলি আদেশ জারি করা হলে আগামী ২৫ ও ২৬ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং ‘চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ’ চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

আর ২৭ জুনের মধ্যে এসব বদলি আদেশ বাতিল না হলে এবং এর মধ্যে চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা না হলে ২৮ জুন শনিবার থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের সব দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে বলে হুঁশিয়ার করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তিনি সম্প্রতি বদলি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কর বিভাগের সিনিয়র কমিশনারকে প্রতিহিংসামূলকভাবে নিপীড়নমূলক বদলি করেছেন। আবার সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্পর্শকাতর দপ্তরে প্রশ্নবিদ্ধ এক কর্মকর্তাকে কর কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান তার একটি দোসর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক জড়ো করে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন, যার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া যৌক্তিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং শাস্তি ও বদলির হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

‘এসব প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, যার প্রভাব রাজস্ব আহরণেও পড়তে পারে।’

মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্বনীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে।

তিনি এখন আন্দোলনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের একের পর এক বদলি করছেন, যেখানে চাকরিবিধি মানা হচ্ছে না বলে ঐক্য পরিষদের অভিযোগ।