অনিয়ম তদন্তের মধ্যেই দাম বাড়ছে লাভেলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। অতিরিক্ত শেয়ার অধিগ্রহণ ও ব্যাংকঋণের বিপরীতে বড় অঙ্কের জামানত-সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ রয়েছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি তদন্তের সময় আরও দেড় মাস বাড়িয়েছে বিএসইসি। এ নিয়ে বিতর্কের মুখে রয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে চলমান বিতর্কের মধ্যেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ারের দাম বাড়ছে কোম্পানিটির। লেনদেনে এগিয়ে থাকা কোম্পানির তালিকায়ও থাকছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিমের নাম।

বিএসইসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটিকে তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং কীভাবে ১ কোটি ১৫ লাখ অতিরিক্ত সাধারণ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে; এই অধিগ্রহণের প্রস্তাব কাদের মাধ্যমে এবং কীভাবে অনুমোদিত হয়েছিল এবং আইএএস ২৪ অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদনগুলোয় সংশ্লিষ্ট লেনদেন যথাযথভাবে প্রকাশ পেয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গত ১৩ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও নাভিদ হাসান খানের সমন্বয়ে গড়া তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এ তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা হয়েছিল। তবে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় আরও দেড় মাস বাড়িয়েছে বিএসইসি।
২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত ব্যাংক থেকে পাঠানো একটি চিঠির ভিত্তিতে জানা যায়, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. একরামুল হকের নামে থাকা ৫০ লাখ শেয়ার ব্যাংকঋণের জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে। বিএসইসি মনে করছে, এর পেছনে রয়েছে অনিয়ম বা শেয়ারহোল্ডারদের অন্ধকারে রেখে নেয়া সিদ্ধান্ত, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি হতে পারে। এই ঋণ চুক্তি এবং জামানতের শর্তাবলি কতটা স্বচ্ছভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তা পুঁজিবাজার আইন অনুযায়ী বৈধ কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। প্রাথমিকভাবে কমিশন মনে করছে, এই ধরনের কার্যক্রম পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যদি এগুলোর পেছনে অনিয়ম থাকে। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর সেকশন ২১-এর আওতায়। একইসঙ্গে জামানত ইস্যুর ক্ষেত্রে ধারা ২০ প্রযোজ্য ধরা হয়েছে।

তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম সর্বশেষ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ এবং ১০ শতাংশ বোনাস। ওই সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ দশমিক ৪৩ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে (১ দশমিক ২৪ টাকা)। একই বছর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ টাকা।

২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যার বিপরীতে মোট শেয়ারসংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে ৪০ দশমিক ০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার। গত ৪ মে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৩ দশমিক ৪০ টাকা দরে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অস্বাভাবিক ওঠানামাও লক্ষ করা গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ওপর এমন অস্বচ্ছ লেনদেন ও ঋণ জামানতের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে। তদন্তে যদি অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে কোম্পানির শেয়ারদর ও বাজার ইমেজ, দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসির এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা। তবে তদন্ত নিরপেক্ষ না হলে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়াও তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।