নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : ঋণের দায়ে ন্যাশনাল ফিডের সম্পত্তি নিলামের ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে ন্যাশনাল ফিডমিল ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিলামের ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে শেয়ার বিজ-এ সংবাদ প্রকাশের পর এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়েছে ন্যাশনাল ফিড। ব্যাখ্যায় নিলাম ঠেকাতে ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে বলে দাবি করেছে ন্যাশনাল ফিড।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ঋণ আদায়ে সম্পদ নিলামের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখা দিয়েছে ন্যাশনাল ফিডমিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়া ব্যাখ্যায় নিলাম ঠেকাতে এরই মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে ন্যাশনাল ফিড। এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ন্যাশনাল ফিড ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান দুটির ন্যাশনাল হ্যাচারির কাছে ২০২৪ সালের ৩১ এপ্রিল শেষে ব্যাংক এশিয়ার বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দফায় দফায় তাগিদ ও তাগাদা আইনি নোটিশের পরও ঋণ পরিশোধ না করেনি ন্যাশনাল ফিড। যে কারণে ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদালতের অনুমতি নিয়ে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্যাংক। ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখা ঋণ আদায়ে গাজীপুর অর্থঋণ আদালতের আদেশে ন্যাশনাল ফিডের সম্পত্তি নিলামে তুলছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। গাজীপুরে থাকা ন্যাশনাল ফিডের ১৫ একর ৭৭ শতক জমি ও কোম্পানির কারখানা ভবন নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আগ্রহীদের নিলামে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে গত ২৪ জুন একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে শেয়ার বিজ। এর জের ধরেই ব্যাখা দিলো ন্যাশনাল ফিড।
এদিকে ন্যাশনাল ফিডমিলের সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ন্যাশনাল ফিডের মোট বকেয়া ঋণ ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ব্যাংক এশিয়ায় ২৭ কোটি ৭৪ লাখ, মেঘনা ব্যাংকে ১৭ কোটি ১৬ লাখ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। কিন্তু লোকসানের কারণে কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। আর কাগজে-কলমে মোট সম্পদ ১৭৬ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী সম্পদ মাত্র ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা লোকসান গুনেছে ন্যাশনাল ফিড। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশও দেয়নি কোম্পানিটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে সরিয়ে নিয়েছে। লাভজনক হবার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা তোলা হলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার পরিণতি কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ন্যাশনাল ফিডও তেমনি একটি কোম্পানি, যা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই কোম্পানিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় ন্যাশনাল ফিডমিল ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৮ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিও’র মাধ্যমে তোলা অর্থের ৪০ শতাংশ ঋণ পরিশোধ ও ৪৫ শতাংশ ব্যবসা সম্প্র্রসারণে ব্যয় করে ন্যাশনাল ফিড। কিন্তু তারপরও কোম্পানিটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং লাভজনক দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানি এক দশকেই লোকসানে পড়েছে। ২০২৪ সালে কোম্পানির বার্ষিক আয় কমে মাত্র ৩০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, এ বছরে লোকসান দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আয় আরও কমে ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নামে। এ সময়ে লোকসান হয় ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।