নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৪৬তম ইয়েন লোন প্যাকেজ দ্বিতীয় ব্যাচের আওতায় ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে কনস্ট্রাকশন অব ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন বিটুইন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন প্রজেক্ট (আই) শীর্ষক প্রকল্পের জন্য গতকাল শুক্রবার এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ সভাকক্ষে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং জাপান সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি টমোহাইড ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
ঋণচুক্তির আওতায় জাপান সরকার বাংলাদেশকে মোট ৯২ হাজার ৭৭ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরকালে গত ৩০ মে জাপানের টোকিওতে প্রকল্পটির ঋণের জন্য বিনিময় নোট স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদীর মধ্যে বিদ্যমান রেলপথের ডাবল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রেলপথের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১৬২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ মেইন লাইন, ২৫ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং লাইন, ১১ কিলোমিটার বিদ্যমান লাইন পুনর্নির্মাণ, তিনটি নতুন স্টেশন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ করা হবে। প্রকল্পটির জন্য জাপান সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ প্রদান করবে। এর আগে প্রকল্পটির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য জাপান সরকারের সঙ্গে ৪ হাজার ২২৮ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের (প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বর্তমান ওই প্রকল্পের ঋণের সুদের হার নির্মাণকাজের জন্য দুই শতাংশ, পরামর্শক সেবার জন্য শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ফ্রন্ট অ্যান্ড ফ্রি (এককালীন) শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।
উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, পল্লি উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ অন্যান্য খাতের প্রকল্পে ঋণ ও বিভিন্ন প্রকার অনুদান সহায়তা হিসেবে অদ্যাবধি জাপান সরকার ৩৩ দশমিক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি বড় অনুষঙ্গ হলো বিগত ৫৩ বছরে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের প্রসারতা। এ কথা প্রণিধানযোগ্য, আধুনিক পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা এবং গতিপ্রকৃতিতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উত্থান-পতন বিশেষ নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে জাপান সরকার বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে জাপানি বাণিজ্য ও সে সুবাদে বিনিয়োগে জাপানিরা বরাবরই আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে। জাপানই হচ্ছে এশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম গন্তব্যস্থল। আবার জাপানি পণ্য বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের সিংহভাগ দখল করে আছে।