নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি সিন্ডিকেট বড় হচ্ছে। হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, ইউক্যাশসহ অন্যান্য এমএফএস সার্ভিসের এজেন্ট হিসেবে হিসেবে কাজ করছে। ফলে দ্রুত বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারা দেশে হুন্ডির এ সিন্ডিকেট কাজ করছে, যার ফলে ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে ‘ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি: বাংলাদেশ কনটেক্সট’ শীর্ষক কর্মশালায় উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহে শ্লথ প্রবৃদ্ধি। তবে গত মাসে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এটিকে ধরে রাখার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিকে অস্বীকার কারার উপায় নেই যে, ব্যাংক চ্যানেলের বাইরে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দেশে আসছে, যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা বিভিন্ন উপায় খুঁজছি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে অবৈধ চ্যানেলে লেনদেন বন্ধ করতে হবে।’
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘হুন্ডি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন উপায়ে এটিকে কমিয়ে আনতে হবে।’
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি কমেছে। এক্ষেত্রে বিশ্বে আমাদের মার্কেট শেয়ার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ব্যাংক চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমার কারণ হিসেবে গবেষণায় ব্যাংকের শাখার দূরত্বকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ পেতে সময়ক্ষেপণ, ব্যাংকারদের সদাচারণের অভাব, নানা ধরনের জবাবদিহিতা, সাপ্তাহিক ছুটি, অবৈধ অভিবাসী ইত্যাদি কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার কারণে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল কাজে লাগাতে হবে। গত পাঁচ বছর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিসর অনেক বেড়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে এটিকে কাজে লাগানো হয়নি। এ কারণে দ্রæত মোবাইল ব্যাংকিংকে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে না পারলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে যেসব সুবিধা প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনদের দেওয়া হয়, সেসব সুবিধা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেওয়া উচিত।’
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে খরচ বেশি। এর প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। তাই খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ব্যাংকারদেরকে গ্রাহকদের সঙ্গে আরও ভালো আচরণ করতে হবে। কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, ‘মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে হুন্ডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমএফএসকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তদারকি করতে হবে।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। গবেষণা প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রমুখ।