আসাদুজ্জামান রাসেল, রাজশাহী: রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে ফুল চাষ। এ অঞ্চলের আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য মানানসই হওয়ায় ফলন ভালো পাচ্ছেন ফুলচাষী। দামও ভালো পেয়ে খুশি কৃষক।
চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ী, কাঁকনহাট, মুণ্ডুমালা, তানোর, আমনুরা, নাচোল, গোমস্তাপুর, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গ্লাডিওলাস, গাদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ও জারবেরাসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের গোপালপুর ও মোহনপুর ইউনিয়নের বাউটিয়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে গোপালপুরের কৃষক কাইউম আলী দেড় বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।
ফুলচাষি কাইউম আলী জানান, ২০১২ সালের দিকে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ১০ কাঠা জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন। পরের বছর থেকে ফুল চাষ বাড়াতে থাকেন। চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে ফুল চাষে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত ফুল বিক্রি করেছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকার। আরও ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হবে। এক মৌসুমে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ফুল চাষ করবেন।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা জমি থেকে ফুল কিনে করে নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর প্রতিটি গ্লাডিওলাস ফুলের স্টিক বিক্রি হয়েছে ১৮ টাকায়। আর বাজারে প্রতিটি গ্লাডিওলাস ফুলের স্টিক বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।
মাটিকাটার বিদিরপুর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, ফুল চাষে সেচ ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন কম হয়। পোকা-মাকড় ও রোগবালাই কম হওয়ায় ফুলের ফলন শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি পাওয়া যায়। ফুলচাষ সহজ পদ্ধতি হলেও পরিচর্যা করতে হয় বেশি। মোহনপুর ইউনিয়নের বাউটিয়া গ্রামের কৃষক নাদিম হোসেন জাপানের একটি সংস্থার প্রকল্পের আওতায় চার বিঘা জমিতে জারবেলা, গাদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ শহর থেকে খুচরা ফুল বিক্রেতারা জমিতে এসে তাদের পছন্দ অনুযায়ী ফুল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। জমিতে থেকেই ফুল বিক্রি করতে পেরে একটু বেশি লাভবান হচ্ছে বলে ফুলচাষিরা খুবই খুশি। কাইউম আলীর ফুল চাষের সাফল্যে এ এলাকার অন্য কৃষকেরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মরিয়ম আহম্মেদ জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফুল চাষের উপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ধান, গম, টমেটো, শাকসবজির পাশাপাশি অর্থকারী ফসল হিসেবে ফুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে ফুল চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সময়মতো সেচ ও সার দেওয়া গেলে ফুলের ভালো ফলন হবে। আগামী বছর ফুলচাষ বাড়াতে আরও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।