সোহেল রহমান : দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বেসরকারি খাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট (৬৬০ মেগাওয়াট ী ২) ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শিকলবাহায় ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্নেস অয়েলভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। ‘বিল্ড-ওন-অপারেট’ (বিওও) ভিত্তিতে নির্মিতব্য এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যথাক্রমে ২৫ বছর ও ১৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনা হবে। এতে ২৫ বছর মেয়াদে কয়লাভিত্তিক দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা এবং ১৫ বছর মেয়াদে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। গত বুধবার ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কয়লাভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি নির্মাণ করবে চায়নার কনসোর্টিয়াম অব ‘হ্যাংঝাও জিনজিয়ান গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’, ‘হ্যাংঝাও ঝেংসেই হোল্ডিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ ও ‘জিনদুন এনার্জি ইক্যুইপমেন্ট (হংকং) লিমিটেড’। প্রস্তাব অনুযাযী, স্পন্সর কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করবে। এ জন্য কোম্পানিকে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র মিরসরাইয়ের করেরহাট থেকে উপকেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং প্রয়োজনীয় ‘বে’ নির্মাণ করতে হবে। মোট এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি থেকে নিট বিদ্যুৎ উপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ২৪০ মেগাওয়াট। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় টাকা ৫২ পয়সা (৮.১৫ সেন্ট)। ২৫ বছর মেয়াদে এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের শিকলবাহায় ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে কনসোর্টিয়াম অব ‘বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড’ ও ‘রয়্যাল হোমস লিমিটেড’। প্রস্তাব অনুযায়ী, স্পন্সর কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় বহন করবে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কোম্পানিকে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শিকলবাহায় ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে ২৩০/৩৩ কেভি শিকলবাহা উপকেন্দ্রের মাধ্যমে অথবা বারআউলিয়ায় ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে বারআউলিয়া ১৩২/৩৩ কেভি শিকলবাহা উপকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে পিজিসিবির উপকেন্দ্র পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন ও এআইএস/জিআইএস ‘বে’ নির্মাণের ব্যয় স্পন্সর কোম্পানিকে বহন করতে হবে। ১৫ বছর মেয়াদে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে আট টাকা ২৫ পয়সা (১০.৪৯ সেন্ট)।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে স্পন্সর কোম্পানি গত বছর গত ২২ জুন প্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে ছয়টি শর্তে এটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে যোগ্য মর্মে মতামত দিয়েছে গঠিত কারিগরি কমিটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি হচ্ছেÑবিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে প্রতি একর জমির জন্য বছরে এক লাখ ৯২ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে এবং এটা প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে বাড়বে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑনির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্পন্সর কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য প্রতি মেগাওয়াটে ২০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
সরকারি হিসাবে, বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা প্রতি বছর ১০ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। এদিকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাস্তবায়নে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। এসব বিবেচনায় নতুন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।