মহসিন আলী, বেনাপোল : যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অফিস না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আমদানি করা পণ্যের বিএসটিআই পরীক্ষা রিপোর্ট পেতে প্রায় তিন সপ্তাহ লেগে যায় এবং তা হাতে হাতে জমা দিতে হয়। অথচ ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যের রিপোর্ট ভারতের সংশ্লিষ্ট ল্যাব থেকে চার-পাঁচদিনের মধ্যে পেট্রাপোল কাস্টম হাউজে ই-মেইলে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত বেনাপোল স্থলবন্দরে বিএসটিআইয়ের স্থায়ী অফিস স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত আজো বাস্তবায়ন হয়নি।
সম্প্রতি মেসার্স ল’রিয়েল বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গার্নিয়ার ব্র্যান্ডের সাত হাজার ৯৭৪ কার্টন ক্রিম আমদানি করে। পণ্য চালানটি খালাসের জন্য বেনাপোল কাস্টম হাউজে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। চালানটির কিছু আইটেম বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বেনাপোলে বিএসটিআইয়ের অফিস না থাকায় পণ্য চালানটি এখনো আটকে আছে বন্দরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ধরনের পণ্য পরীক্ষার জন্য বেনাপোলে বিএসটিআইয়ের খুলনা অফিসের শরণাপন্ন হতে হয়। বেনাপোল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে খুলনায় পাঠানো হয়। তারপর তা ঢাকায় পাঠানো হয়। আবার একই কায়দায় ঢাকা থেকে পরীক্ষা করে রিপোর্ট পাঠানো হয় খুলনায়। সেখান থেকে বেনাপোলে নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও খুলনা থেকে বিএসটিআই কর্মকর্তারা নিয়মিত বেনাপোল যান না। বিএসটিআই কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হলে এবং গাড়ি পাঠালে তারা বেনাপোল বন্দরে গিয়ে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন। এজন্য আমদানি করা পণ্যের বিএসটিআই পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে প্রায় তিন সপ্তাহ লেগে যায় এবং তা হাতে হাতে জমা দিতে হয়।
আমদানিকারকরা জানান, ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যের রিপোর্ট ভারতের সংশ্লিষ্ট ল্যাব থেকে চার-পাঁচদিনের মধ্যে পেট্রাপোল কাস্টম হাউজে ই-মেইলে পাঠানো হয়। অথচ আমদানি করা পণ্যের রিপোর্ট পেতে প্রায় তিন সপ্তাহ লেগে যায়। খুলনা থেকে নিয়ে এসে জমা দিতে হয়। এতে পণ্যের ওয়্যারহাউজ ডেমারেজ গুনতে হয়। পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ সুদ বহন করতে হিমশিম খেতে হয়।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের স্থলবন্দর সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরে বিএসটিআইয়ের স্থায়ী অফিস না থাকায় কোনো পণ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হলে কার্যালয়টিকে চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়। গাড়ি পাঠালে বিএসটিআই কর্মকর্তারা বেনাপোল বন্দরে এসে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। রিপোর্ট নিতে অনেক সময় লেগে যাওয়ায় আমদানি করা পণ্যের ওয়্যারহাউজ ডেমারেজ গুনতে হয়। পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ সুদ বহন করতে হিমশিম খেতে হয় ব্যবসায়ীদের।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, খুলনা থেকে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার বিএসটিআই কর্মকর্তারা যদি বেনাপোল বন্দরে এসে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতেন, তাহলে আমদানি করা মালামাল দ্রুত খালাস নিতে এবং পণ্যের অতিরিক্ত খরচ থেকে রেহাই পেতেন আমদানিকারকরা। এসব খরচ কার্যত পরোক্ষভাবে ক্রেতা সাধারণকেই বহন করতে হয়।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার মারুফুর রহমান জানান, বেনাপোল কাস্টম হাউজে একটি বিএসটিআই অফিস স্থাপনের জন্য রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এটি স্থাপিত হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।