শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে অর্থ জমাদানে উৎসাহ বাড়ৃক

সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে চার কোটিরও বেশি টাকা জমা দিয়েছে বেসরকারি একটি কোম্পানি। গত চার বছরের লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশের এক দশমাংশ অর্থ চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে কোম্পানিটি। ওই চেক গ্রহণ অনুষ্ঠানে শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, কল্যাণ তহবিলটিতে এ পর্যন্ত জমা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ সংবাদ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। যেসব প্রতিষ্ঠানের এ তহবিলে লভ্যাংশের অর্থ জমাদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তারা এর পরিপালন অব্যাহত রাখলে তহবিলটির আকার আরও বড় হবে। উপযুক্ত পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও তার পরিবারের সদস্যরা এখান থেকে সহায়তা নিতে পারলে সংশ্লিষ্টদের জীবনেই শুধু ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে নাÑএর প্রভাব পড়বে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে। লভ্যাংশের অর্থসংশ্লিষ্ট তহবিলে জমাদানে পরিপালনের উদাহরণ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারাও অনুসৃত হবে বলে আশা।
বস্তুত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠন করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের জন্য। উদ্দেশ্যÑশিল্পায়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি, মানবিক মূল্যবোধের উত্তরণ ঘটানো ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। মনে রাখা ভালো, যেসব শ্রমিক তার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় ও শ্রম নিবেদন করেন; মজুরির বাইরে তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কল্যাণ নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উদ্যোগ খুব কম। বেসরকারি খাতে এমন সমস্যা আরও বেশি বৈকি। এতে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাহত হয় সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও তার পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা। এও ঠিক, বাস্তব কিছু সীমাবদ্ধতার কারণেই সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট তহবিলটিতে লভ্যাংশের অর্থ জমাদানের মাধ্যমে এ সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের যথাযথ পরিপালন দেখতে চাইব আমরা।
প্রসঙ্গত স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের একটি কথা আমরা এখানে স্মরণ করতে চাই। তিনি বলেছেন, প্রতিষ্ঠান শ্রমিকের জন্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিলে তারা এর উপযুক্ত প্রতিদান দেয়। এ বক্তব্য শ্রমঘন সব প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের আমলে নেওয়া দরকার। এটি বিবেচনায় রেখে তারা যদি শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিতে লভ্যাংশের অর্থসংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা দেন এবং ওখান থেকে তাদের উপকার লাভ হয়, তাহলে কাজে নিয়োজিত থাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তার অনুভূতি গাঢ় হবে। এর মাধ্যমেও বৃদ্ধি পাবে তার উৎপাদনশীলতা। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত শ্রমিকদের যথাযথ পাওনা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের জন্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপ বাড়ানো। এ-সংক্রান্ত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, তহবিলের অর্থ বা তার অংশবিশেষ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। বোর্ডের অনুমোদনক্রমে তফসিলি ব্যাংকে জমার সুযোগও রাখা হয়েছে আইনে। বিদ্যমান অর্থ কোন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, জানা নেই। আমরা আশা করব, এসব বিষয়ও অংশীজনদের কাছে স্পষ্ট করা হবে। এ তহবিল থেকে অনুদান প্রাপ্তির জন্য আবেদন করে কেউ যাতে হয়রানি বা কোনো কর্মকর্তার অনৈতিক দাবির শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।