নির্বাচন কমিশন গঠনে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। নিয়ম অনুযায়ী এই সার্চ কমিটিই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এই সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

সার্চ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি শিরীন আখতার।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সার্চ কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর তা বুধবার প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। এই অনুসন্ধান কমিটি ন্যূনতমপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে।

উল্লেখ্য, একজন কমিশনার বাদে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটিÑএমন মন্তব্য বিএনপির। গতকাল কমিটি গঠনের খবর প্রকাশের পর রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অন্য এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিএনপি জানতে পেরেছে রাষ্ট্রপতি ছয়জনকে নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। রাষ্ট্রপতি আলোচনা শুরুর পর একটি আশার আলো দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে, চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটি। কারণ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রো-ভিসি সরকারের নিয়োগ করা।

তিনি বলেন, এ সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি শুধু হতাশই হয়নি, ক্ষুব্ধও হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায়।

অপরদিকে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। এ কমিটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো নাম প্রস্তাব করা হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাকে তিনি (রাষ্ট্রপতি) মনোনয়ন দেবেন, সেটা তো একান্তই রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। আমরা কোনো নাম দিচ্ছি না এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করছি না যে, আমাদের দলীয় কোনো ব্যক্তি এই সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।’

এর আগে ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চার সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি করেছিলেন। ওই কমিটিরও প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। মাসুদ আহমেদ ও মোহাম্মদ সাদিক ওই কমিটিতে ছিলেন। বাকি তিন সদস্য হিসেবে ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, পদাধিকারবলে তৎকালীন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) আহমেদ আতাউল হাকিম এবং সরকারি কর্মকমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান এটি আহমেদুল হক চৌধুরী।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুটি সূত্র জানিয়েছে, সার্চ কমিটি গঠন করতে জিল্লুর রহমানের ওই ফর্মুলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও অনুসরণ করেছেন। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং নারী প্রতিনিধি হিসেবে শিরীন আখতারকে অন্তর্ভুক্ত করে এর আকার বাড়িয়েছেন।

নতুন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেন।