নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বছরের প্রথমার্ধে প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়বে এ দাম। পাশাপাশি অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের দামও বাড়বে। এছাড়া শিল্প খাতের কাঁচামালের দাম বাড়বে চলতি বছর। গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত গ্লোবাল কমোডিটি আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৪৩ ডলার। তবে ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) তা প্রায় ১২ ডলার বেড়ে দাঁড়াবে ৫৫ ডলারে। অর্থাৎ দাম বাড়বে প্রায় ২৮ শতাংশ। এ বছর জ্বালানি তেল উৎপাদন দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেল কমানো হবে। তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর এ সিদ্ধান্তই দাম বৃদ্ধির কারণ।
সমাপ্ত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১০ শতাংশ বাড়ে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকবে। তবে ২০১৮ সালে তা আবারও বাড়বে। এ সময় জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬০ ডলার।
তবে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হয় না। সরকার আগেই এটি নির্ধারণ করে দেয়। কয়েক বছর ধরেই লোকসানে থাকার পর গত দুই বছরে জ্বালানি তেলে প্রচুর মুনাফা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও তাদের এ মুনাফা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দুই মাস ধরে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন মন্ত্রীরা। তবে মার্চের আগে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে জানান বিপিসির সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিপিসির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত মাসে তেলের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এক্ষেত্রে মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ সময়ের তেলের দাম বাড়লে দেশে আর কমানো হবে না। তবে আগামী দুই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমলে দেশে কমানো হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, চীনের কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ কমানোর পর গত বছর এর দাম ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দামও ৮ শতাংশ বাড়ে। চলতি বছর এসব জ্বালানির দাম বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
সরবরাহ সীমিত থাকা ও চীনের চাহিদা বাড়ার কারণে শিল্পের কাঁচামালের দাম চলতি বছর ১১ শতাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এ বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ বাড়বে বলে আভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এদিকে গত বছর বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম নি¤œমুখী থাকলেও চলতি বছর তা বাড়তে শুরু করবে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে কৃষিপণ্যের দাম ১ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে শস্যজাতীয় পণ্যের দাম ৩ শতাংশ কমতে পারে। সুদের হার কিছুটা বাড়ায় বিশ্বব্যাপী মূল্যবান পাথরের দাম ৭ শতাংশ কমতে পারে।