মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল তথ্য দেখা যায়। একই ধরনের সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রেও। তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেডের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এ ধরনের ঘটনা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি আয়, মুনাফা বেশি দেখানোসহ আরও কিছু গরমিল পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রেড হেরিং প্রসপেক্টাসের ১১ ও ৩৩৪ পৃষ্ঠায় ২০১৩ সালে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হিসেবে দেখানো হয়েছে দশমিক ৯৪ টাকা। কিন্তু একই ইপিএস ৩১৩ ও ৩২৬ পৃষ্ঠায় দশমিক ৯০ টাকা দেখানো হয়েছে। সবক্ষেত্রে মুনাফা এক হলেও ইপিএস হিসাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছে করে এমনটি করেছে বলে অভিযোগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
এদিকে কোম্পানির প্রসপেক্টাসে মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনের ৩১ পৃষ্ঠা অনুযায়ী, ২০১২ ও ২০১৩ সালে রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ একই পরিমাণ রয়েছে। এই রিজার্ভের মধ্যে অবচয়যোগ্য সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দুবছরে একই পরিমাণ সম্পদ দেখানো হয়েছে। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভেতরে রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসব সম্পত্তির নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে। যে কারণে বিএএস-১৬ অনুযায়ী, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। কিন্তু কোম্পানিটি সম্পদের ওপর অবচয় চার্জ করেনি।
বিএএস-৩৬ অনুযায়ী, অবচয়যোগ্য সম্পদের বর্তমান মূল্য যদি ভবিষ্যতে সুবিধা আনার তুলনায় কম হয়, তাহলে ইমপেয়ারম্যান্ট করতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ও সম্পদ কমে আসে। যা হওয়াটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন হিসাববিদরা। বিএসইসির সাবেক অফিস অব দ্য চিফ অ্যাকাউনটেন্ট, কনসালটেন্ট মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী অবশ্যই ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর অবচয় চার্জ করতে হবে। অন্যথায় মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হবে। যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভুল তথ্য প্রদান করবে।
শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে নিট আয়ের ওপর পাঁচ শতাংশ ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করতে হয়। কিন্তু ডেল্টা হসপিটাল ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে এ ফান্ড গঠন করে। নিয়ম অনুযায়ী এর আগে ফান্ড গঠন না করে শ্রমিকদের ঠকানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. বাকবুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ২০০৬ সাল থেকে এই ফান্ড গঠন করার কথা থাকলেও অনেক কোম্পানির মতো আমরাও তা পরিপালন করতে পারিনি।আইপিওতে আসতে গেলে এই নিয়ম পরিপালন করতে হয়। সে জন্যই পরবর্তীতে আমরা এই ফান্ড গঠন করি। কোম্পানির ইপিএসইসহ অন্যান্য বিষয়ের গরমিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার জানামতে এখানে কোনো ভুল নেই।
অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের হিসাবে ২৮৮ পৃষ্ঠায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপেন্স হিসাবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া একই পরিমাণ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলেও ২৯০ পৃষ্ঠার ক্যাশ ফ্লোতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ২৬২ পৃষ্ঠায় দুই কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রদান দেখানো হয়েছে। একই বিষয় নিয়ে দুই জায়গার ক্যাশ ফ্লোতে দুই রকম তথ্যতে বিভ্রান্ত দেখা গেছে।
এছাড়া প্রতিবেদনের ৩৩৪ পৃষ্ঠায় ইনকাম স্টেটমেন্ট হিসাবে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সিঙ্গেল কোম্পানির হিসাবে ডেফার্ড টেক্স ব্যয় দেখানো হলেও কনসোলিডেট হিসাবে নেই। নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানির কনসোলিডেট হিসাব দেখানোর কথা।
জানা গেছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়ে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে ‘ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসবে। এজন্য ইতোমধ্যে রোড শো অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসই) অনুমতি পেলে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করবে। পরে সাধারণ জনগণের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে। দর নির্ধারণের পর ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য যতগুলো শেয়ার বিক্রি করা প্রয়োজন, ততগুলো শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি। এই টাকার একটি বড় অংশ দিয়ে মেশিনারিজ আমদানি করবে কোম্পানিটি। এ বাবদ ব্যয় করা হবে ৩১ কোটি ৯ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে আইপিও খরচে।
যেসব মেশিন কেনা হবে, তার মধ্যে রয়েছে: লাইন্যাক মেশিন, এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং এটি ইকুইপমেন্ট।