ভ্যাট দেবে উবার-পাঠাও কর দেবেন গাড়ির মালিক

রহমত রহমান: দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন রাইড শেয়ারিং সেবা। প্রথমবার উবার এ সেবা চালু করলেও বর্তমানে পাঠাও, ওভাইসহ অনেক কোম্পানি এ সেবা চালু করেছে। এ খাতের ব্যবসা সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো এ সেবার ওপর মূসক আরোপ করেছে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে অ্যাপসভিত্তিক সেবায় গাড়ি দেওয়া মালিকদের আয়ের ওপর উৎসে আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভ্যাট ও উৎসে আয়করের ফলে এ অ্যাপসভিত্তিক সেবা ব্যয় ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। বাড়তি খরচ কোম্পানি বা গাড়ি মালিক যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে নেবে। সে জন্য বাড়তি খরচ কোম্পানি বা গাড়ি মালিকদের থেকে আদায় করা বা ভ্যাট-কর মওকুফ করার অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনের রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। দেশে ২০১৬ সাল থেকে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হয়। এর প্রায় তিন বছর পর সরকার ভ্যাট আরোপ করে। সেবাটি মূসক আইনের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় এতদিন ভ্যাট আদায় করা যায়নি। তবে আগামী অর্থবছর মূসক আইনে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবার অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে মূসকের আওতায় আনা হয়।
বাজেট প্রস্তাবের পর এনবিআর থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ ধরনের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তিগত পরিবহনের মালিক নিজে কিংবা চালক নিয়োগ দিয়ে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যাত্রী পরিবহন সেবা প্রদান করে আসছে। এ সেবার বিপরীতে যাত্রীরা নিজ গন্তব্যে গিয়ে চালককে ভাড়া পরিশোধ করেন। গাড়ির চালক যাত্রী থেকে যে সেবামূল্য গ্রহণ করেন অ্যাপসভিত্তিক সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান (উবার, পাঠাও) তার আংশিক পেয়ে থাকে।
মূসক আইন অনুযায়ী, সব বাহনের চালক কর্তৃক প্রদত্ত সেবা ব্যক্তিগত সেবা হিসেবে মূসক অব্যাহতি পেয়ে থাকেন। সে জন্য চালক সেবা প্রদানের বিপরীতে যে সেবামূল্য প্রায় সে অংশটুকু অব্যাহতিপ্রাপ্ত। সর্বমোট সেবার ওপর যে অংশ অ্যাপস পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত হয় শুধুমাত্র সে অংশের ওপর নিট পাঁচ শতাংশ হারে মূসক আদায় করতে হবে। অপরদিকে; প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে আয়করের প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থার আওতায় রাইডিং সেবার প্রদানের মাধ্যমে মোটরযান মালিকরা যে অর্থ পাবেন তার ওপর উৎসে কর আরোপ করা হলো।
বাজেট প্রস্তাবের দিন সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে গুলশান-১ আসা সোহেল হোসেন নামে একজন যাত্রী ফেসবুকে স্টাটাস দেন। তিনি লেখেন, মিরপুর-১ থেকে গুলশন আসতে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা যায়। আজ উবারের আসলাম ৪৮৭ টাকা দিয়ে। চালক জানিয়েছে ভ্যাট ও করসহ নিতে হবে। তবে ভ্যাট ও করের কোনো ডকুমেন্ট সে দেখাতে পারেনি। এছাড়া অনেকেই বাজেট প্রস্তাবের পরদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অভিযোগ করেন। যদিও এ ভ্যাট-কর যাত্রীদের থেকে নেওয়ার বিষয়ে বাজেটে বা আদেশে কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন দ্বিতীয় সচিব শেয়ার বিজকে বলেন, আদেশে যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাট ও কর নেওয়ার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান যে অংশ পাবেন তার ওপর মূসক দেবেন। আর গাড়ি মালিকের আয়ের ওপর উৎসে মূসক দেবেন। এর সঙ্গে যাত্রীর কি সম্পর্ক বা ভাড়া ভাড়ানোর কি সম্পর্ক? তবে বাজেটে পর বিষয়টি নিয়ে রাইডিং শেয়ার প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর উদ্যোগে সম্প্রতি প্রকাশিত পলিসি ইনসাইটসের এক নিবন্ধে বলা হয়, দেশে অ্যাপসভিত্তিক রাইড ব্যবহারের বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, পাবলিক বাস বা রিকশায়ও চড়েন না এমন যাত্রীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশই উবার বা পাঠাও ব্যবহার করছেন। সব মিলিয়ে উবার ও পাঠাও সেবা সমন্বিতভাবে বার্ষিক দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি করেছে। এর আগে এসব যাত্রীর প্রায় সবাই সিএনজি অটোরিকশার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।