সয়াবিন অয়েলের রেগুলেটরি ডিউটি পোলট্রি শিল্পের গলার কাঁটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুখবর তো নেই উল্টো ‘সয়াবিন অয়েল কেক’ আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি এখন পোলট্রি শিল্পের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। পোলট্রিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে পোলট্রি শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে ফিড তৈরিতে ব্যবহার করা অত্যাবশ্যকীয় এ কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক ও পাঁচ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়েছে। পোলট্রিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলস (বিপিআইসিসি) এক বিবৃতিতে বাজেটের এ প্রস্তাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিপিআইসিসি বলছে, এতে পোলট্রি শিল্পের চলমান সংকট আরও ঘনীভুত হবে।
বিপিআইসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, দুবছর থেকে পোলট্রি ফিডে ব্যবহার করা প্রধান দুটি কাঁচামাল ভুট্টা ও সয়াবিন অয়েল কেক আমদানিতে সুবিধা চেয়ে আসছেন খামারি ও উদ্যোক্তারা, কিন্তু বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রাপ্তির খাতা শূন্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সয়াবিন অয়েল কেকের ওপর ১০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি আরোপ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো রেগুলেটরি ডিউটি ছিল না। রেগুলেটরি ডিউটি না থাকায় সাফটা চুক্তির আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সয়াবিন কেক আমদানি করতে পারত পোলট্রি ও মৎস্য ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সয়াবিন অয়েল কেকের চাহিদা প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন, যার ৫০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। অবশিষ্ট ৫০ ভাগের অর্ধেক সার্কভুক্ত দেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হয় আর বাকি অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মসিউর বলেন, রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করায় এখন সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে যে চার লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কেক শুল্ক সুবিধায় আমদানি করা হতো তার ওপরও নতুন করে শুল্ক আরোপিত হলো। অর্থাৎ মোট প্রায় আট লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কেক শুল্ক জালে আটকা পড়ল। এ কারণে পোলট্রি ও ফিস ফিডের উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। বেড়ে যাবে পোলট্রি ও ফিস ফিডের দাম।
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান বলেন, পোলট্রি ফিডের শতকরা প্রায় ২০-২৫ ভাগ সয়াবিন মিল। দুই বছর আগেও সয়াবিন মিল আমদানিতে কোনো শুল্ক ছিল না। ২০১৬-১৭ সালের এসআরওতে একটি পরিবর্তন এনে ১০ শতাংশ হারে কাস্টমস শুল্ক আরোপ করা হয়।
উল্লেখ্য, সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনা শুল্কে সয়াবিন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই শিল্পের বাইপ্রোডাক্টই হচ্ছে সয়াবিন অয়েল কেক। তাই এমন একটি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা সাংঘর্ষিক বলে তা প্রত্যাহারের জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলাম। আহসানুজ্জামান বলেন, ভোজ্য তেল একটি ফুড সেক্টর। অন্যদিকে ফিড ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি একটি ফিড সেক্টর। শুল্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারের যে নীতি সে অনুযায়ী ফুড সেক্টর শুল্কের আওতায় থাকলেও ফিড সেক্টরকে সাধারণত শুল্কমুক্ত রাখা হয়। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেট বক্তৃতায় পোলট্রি শিল্পের জন্য সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং সয়াবিন অয়েল কেকের আমদানি শুল্ক শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে পাঁচ শতাংশ হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। এতে লাভ তো হলোই না, উল্টো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ল চ্যালেঞ্জের মুখে টিকে থাকা এ শিল্পটি। তিনি বলেন, এ-সম্পর্কিত একটি চিঠি এনবিআর এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
পোলট্রিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের ওপর কর ও শুল্ক আরোপের কারণে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ এমনিতে সাড়ে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। এখন যদি সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকেও সয়াবিন কেক আমদানিতে পাঁচ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হয় তবে উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। তারা বলছেন, সরকারকে অবশ্যই রেগুলেটরি ডিউটি শূন্য করার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। এর পাশাপাশি পোলট্রি ফিডের প্রধান কাঁচামাল ভুট্টা- পোলট্রি ফিডে যার পরিমানণপ্রায় ৬০ শতাংশ, তা আমদানিতে পাঁচ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার করতে হবে।