জয়পুরহাটে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ

শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে ১১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব প্রদানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, প্রায় আট বছর ধরে ১১২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছিল প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। সরকার সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ জুনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জয়পুরহাট জেলায় ১১২ সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিব মনোয়ারা ইশরাত। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৫ জন, পাঁচবিবি উপজেলায় ৩৩ জন, আক্কেলপুর উপজেলায় ১৯ জন, কালাই উপজেলায় ১৫ জন ও ক্ষেতলাল উপজেলায় ১০ জনকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে চলতি দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পাওয়া অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, উপসচিব মনোয়ারা ইশরাত স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের ৫নং শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একই উপজেলাধীন সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে পদায়নের অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। তবে জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান রাজনৈতিক নেতাদের তদবির ও চাপে সে নিয়ম ভঙ্গ করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট পৌরসভায় নার্সারি, পুলিশ লাইনস্, জয়পুর রাজবাড়ী দেবপাল আদিবাসী, কালেক্টরেট ও চকগোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি শূন্যপদ খালি থাকলেও কাশিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাসরিন আকতার ও খঞ্জনপুর শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মালেকা পারভীনকে শুধু পৌরসভা এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সদর উপজেলার সগুনা গুপীনাথপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাইলা আকতার জাহানকে জয়পুরহাট পৌরসভার নার্সারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং দাদড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রওশন আরাকে পুলিশ লাইনস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া মহিলাদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হলেও হালট্রি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত পুরুষ শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামকে পৌরসভার চকগোপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে পৌরসভায় কর্মরত কাশিয়াবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লায়লা আরজুমান্দকে বম্বু ইউনিয়নের কড়ই কাদিপুর, জয়পুরহাট মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফারহানা-ই-জান্নাতকে ধলাহার ইউনিয়নের আটঠোকা ও নাজমিন আকতারকে দোগাছী ইউনিয়নের শিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের আউশগাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিজওয়ানা জেসমিনকে পাশের ইউনিয়নে না দিয়ে ধলাহার ইউনিয়নের ভানাইকুশলিয়ায়, একই স্কুলের রোকসানা খাতুনকে আমদই ইউনিয়নের কয়তাহার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, পুরানাপৈল ইউনিয়নের সগুনা গোপিনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোকসানা খাতুনকে ভাদসা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ধলাহার ইউনিয়নের নিধি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রশিদকে ভাদসা ইউনিয়নের বাঁশকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং জামালপুর ইউনিয়নের দাদড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে তার পাশের ভাদসা ইউনিয়নের বিদ্যালয় ফাঁকা থাকলেও তাকে ধলাহার ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার কল্যাণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
চলতি দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, নীতিমালা না মেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব দিলে আমরা কী করব? আমাকে যে ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে সেই ইউনিয়নে তিনজন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আমাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার বাড়ি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৮ কিমি। এতে করে সবসময় সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পাঠদান করা কী করে সম্ভব?
ধলাহার ইউনিয়নের নিধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রশিদ জানান, আমার ইউনিয়ন ও পাশের ইউনিয়নে বিদ্যালয় ফাঁকা থাকলেও আমাকে অন্য ইউনিয়নে দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান জানান, রাজনৈতিক ও ওপরমহলের চাপ থাকলে আমার মতো কর্মকর্তার করার কী থাকে? রাজশাহী বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক আবুল খায়ের জানান, ভুক্তভোগী কোনো পক্ষ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।