পাঠকের চিঠি

তারুণ্যের জয়গানে চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রভাতের পূর্ব আকাশের অরুণের উজ্জ্বল রশ্মি, মেঘের আড়ালে যেমনি হারিয়ে যায়, তেমনিভাবে প্রতিনিয়ত তারুণ্যনির্ভর এ সমাজের  তরুণ প্রজš§ নানা অশালীন,  অনৈতিক, অপরাধজনক কার্যে অংশগ্রহণ করে মূল্যবোধের অবক্ষয় করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নাগরিকের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক জীবন।

সৃষ্টি হচ্ছে অরাজকতা, অনিয়ম এবং কত কত অসঙ্গতি! সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো, আগ্রাসী হয়ে উঠছে এ তরুণ্য, যেখানে বিন্দুমাত্রও দেশমাতৃকার ছোঁয়া নেই! অন্যদিকে তারুণ্য শক্তির ক্ষুদ্র একটি অংশ মানবিক কাজে জড়িত হয়ে সমাজের সব সমস্যা দূরীকরণে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বস্তুত আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে চাই তারুণ্যের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

দু-একটা উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। অধিকাংশ তরুণ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, রাস্তা পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, সহচরদের সঙ্গে মাদকদ্রব্য সেবন এবং ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে অশ্লীল ভিডিও দর্শনের মতো জঘন্য কাজগুলো বেড়েই চলছে। এতে তরুণ প্রজন্মের মস্তিষ্ক বিকৃত হচ্ছে এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে।

পক্ষান্তরে, কিছু মুক্তমনা তরুণ, আগামীর উজ্জ্বল নক্ষত্র বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সমাজের আমূল পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ-সকল স্বেচ্ছাসেবী কাজের মধ্যে উল্লেখ্য ‘ব্লাড ব্যাংক’। একটি সময় ছিল মানুষ রক্তের অভাবে প্রাণ হারাত, কিন্তু তরুণদের একটি অংশ যখন ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হয়েছে, তখন থেকে এমন দুঃসংবাদ আর শুনতে হয়নি এ-জাতিকে। তরুণরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মুমূর্ষু রোগীর সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখছে। এছাড়া এ তরুণ সমাজ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে দেশের আনাচে-কানাচের পথশিশু, এতিমখানার বাচ্চাদের নিয়ে দুই বেলা দুই মুঠো একসঙ্গে খেতে পারার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের অসচ্ছল এবং স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর সন্তানদের মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার মতো নানা সামাজিক সংগঠন চোখে পরার মতো এবং এসব সামাজিক সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। অথচ এ-সমাজের মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কিছু কিছু তরুণ এসব সামাজিক সংগঠন থেকে নিজেকে দূরে রাখছে, শুধু ইতিবাচক মনোভাবের অভাবের জন্য।

একই রকমভাবে তারুণ্যের এ-সামাজিক কার্যক্রম পৌঁছে গেছে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে, যেখানে বন্যার্ত রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের, রয়েছে দুর্গম এলাকার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী। এছাড়া তরুণ সমাজ বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ এবং ফ্রি প্রাইভেট পড়ানোর সুবিধা দিচ্ছে। এসব মানবতার কাজে সব তরুণ আগ্রহী না, সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারলেই কেবল আগামী প্রজন্ম অন্তর্ভুক্ত হবে এ-সামাজিক কাজে।

সর্বোপরি, তরুণ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঘোর অমানিশা থেকে সমাজ এবং দেশকে আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। এবং দেশের তারুণ্য শক্তির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব জাগ্রত হলে দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তারুণ্য শক্তির মনোভাবের পরিবর্তন সম্ভব হলেই পুরো দেশ নয় বিশ্বকে পরিবর্তন সম্ভব। কেননা এ-তারুণ্য শক্তি সামাজ ও দেশের শত্রুদের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর। তারুণ্য শক্তির কাজগুলোর বীজয় অর্জনে, সাফল্য লাভে প্রত্যেককে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।

আরিফ হোসাইন

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়