শেয়ার বিজ ডেস্ক : সরকার মালিকদের বাদ দিয়ে ওষুধ শিল্প নিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন দেশের শীর্ষ ওষুধশিল্প মালিকেরা। তাঁরা বলেছেন, সরকারের এমন নীতিগত পদক্ষেপ দেশের ওষুধ শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ অবস্থায় দ্রুত প্রায় এক হাজার ওষুধের নিবন্ধন অনুমোদনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বাপি)।
গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাপির কার্যালয়ে ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই দাবিগুলো তুলে ধরেন শিল্প মালিকেরা। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এবং বাপি।
সভায় বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ এখন ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় এবং ১৫০টির বেশি দেশে রপ্তানিও হয়। এই খাতের ভিত্তি ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি। অথচ বর্তমানে এই সাফল্য হুমকির মুখে পড়েছে।”
বাপির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ কায়সার কবির অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কিছু নীতিমালা এই খাতকে আশির দশকে ফেরত পাঠাতে পারে।
সভায় বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও মূল্য নির্ধারণসহ বিভিন্ন কমিটিতে এখন আর শিল্পমালিকদের রাখা হচ্ছে না। অথচ অতীতে এই সব কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ছিল।
বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হালিমুজ্জামান বলেন, “মনে হচ্ছে ওষুধশিল্পটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত এই শিল্পকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”
বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থাকায় মেধাস্বত্বের ছাড় পায়, যা ওষুধের দাম সহনশীল রাখে। তবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে এই সুবিধা হারাবে, তখন ওষুধের দাম বাড়বে।
একই সভায় অভিযোগ ওঠে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধ নিবন্ধনের কাজ বিলম্ব করছে, কমিটির বৈঠক নিয়মিত হচ্ছে না। মালিকেরা চান, এক হাজার ওষুধের নিবন্ধন দ্রুত শেষ করা হোক।
ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে, জানতে চাইলে জানানো হয়, গজারিয়ার এপিআই শিল্প পার্কে প্লট ছোট হওয়ায় এবং গ্যাস সংযোগ না থাকায় কাঁচামাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া সভায় নকল ওষুধের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, কিছু অসাধু চক্র প্রতিস্থাপিত কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ওষুধ বাজারজাত করছে, যা গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মে. জে. (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
আরআর/

Discussion about this post