শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে ‘সুখবর’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানির সঙ্গে বৈঠকের আগে এ কথা জানালেন তিনি।
অবশ্য গাজা নিয়ে ঠিক কোন ধরনের ‘সুখবর’ তার কাছে রয়েছে, তা মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট খোলাসা করেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
স্থানীয় সময় গত বুধবার হোয়াইট হাউসে এক বিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে উদ্দেশ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের গাজা নিয়ে কিছু ভালো খবর আছে এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা খুব উচ্চপর্যায়ে কাজ করছি। আপনি দারুণ কাজ করছেন।’
যদিও ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন তিনি হোয়াইট হাউসে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানির সঙ্গে ডিনার বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানটি প্রেসের জন্য ‘ক্লোজড’ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রেসকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে।
আনাদোলু বলছে, এই কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি এমন সময় হচ্ছে যখন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো গত মঙ্গলবার জানায়, দোহায় গত ২৪ ঘণ্টায় এই আলোচনায় ‘নাটকীয় অগ্রগতি’ হয়েছে। গত ৬ জুলাই শুরু হওয়া আলোচনায় মূল লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময়ের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১৩ এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘চুক্তির পথে এখন বাধা নেই।’ সেখানে আলোচনার সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারে ‘অতিরিক্ত নমনীয়তা’ প্রদর্শনের অনুমোদন দিয়েছেন, যা আলোচনার গতি বাড়িয়েছে।
এদিকে গত বুধবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ভিড়ে চাপা পড়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরায়েল পরিচালিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।
জিএইচএফ জানিয়েছে, খান ইউনিসের কাছের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ১৯ জন চাপা পড়ে আর একজন ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সংস্থাটি দাবি করেছে, সেখানে হামাস বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে।
তবে গাজার মিডিয়া অফিস এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, জিএইচএস তাদের অপরাধকে ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২১টি মরদেহ পেয়েছে। যারা কাঁদানে গ্যাসে দম বন্ধ ও চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। এখনও ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন। খাদ্যাভাবও চরমে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, হামাস এখনও প্রায় ৫০ ইসরায়েলিকে বন্দি করে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২০ জনকে জীবিত মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের কারাগারে ১০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন।
ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, তাদের অনেকে নির্যাতন, খাদ্য সংকট এবং চিকিৎসা অবহেলার শিকার।

Discussion about this post