নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৩১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৩৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ০ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৬টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৬৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৪৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২২টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি ফান্ড ও কোম্পানির দরদাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর। ‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে ২৮টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে কোনো ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৬টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার ২০৫টি শেয়ার ও ইউনিট তিন লাখ ১৯ হাজার ৫১ বার হাতবদল হয়েছে। এর জেরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।
চলতি বছরে প্রথমবারের মতো এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এমন ইতিবাচক বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান।
এই সাত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দরের সীমা স্পর্শ করেছে। দিনের সর্বোচ্চ দরে প্রতিষ্ঠান তিনটির শেয়ারের বিক্রয় আদেশের ঘর একপর্যায়ে শূন্য হয়ে পড়ে। দিনের সর্বোচ্চ দরেই প্রতিষ্ঠান তিনটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে।
এ তিন প্রতিষ্ঠান হলোÑইনটেক লিমিটেড, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নূরানী ডাইং। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানো বাকি চার প্রতিষ্ঠান হলো-নূরানী ডাইং, বিডিকম অনলাইন, গোল্ডেন সন, ফু-ওয়াং সিরামিক এবং শ্যামপুর সুগার মিল।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা অনাস্থা বিরাজমান ছিল। সেই অনাস্থা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। এতে সূচক ও লেনদেনে গতি বাড়ছে। সামনে সূচক ও লেনদেন আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছিল। বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা বাজারে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজারে এখনও অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত মন্দ ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ার না কিনে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৪২টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১২৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৯৪টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ২৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ২১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; যা আগের কার্যদিবসে ছিল ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কি নাÑসেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোয়ও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post