পাম অয়েলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে গত ৩ আগস্ট ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি। তিনি দেখতে পান, প্রতিকেজি পাম অয়েল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পরিমাপক একক পরিবর্তন করে হিসাব করলে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দামের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গতকালই সুপারিশসহ একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করতে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে পরিমাণের একক কেজির পরিবর্তে লিটারের ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া খোলা পাম অয়েল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে লিটারে ৫ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, তা নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার সুপারিশ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে মিলগেট, পরিবেশক বা পাইকারি এবং খুচরা মূল্যে নজরদারি কার্যক্রম আরও জোরদার করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের দুর্মূল্যে ভোক্তা সাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোজ্যতেলের ঘাটতি না থাকলেও পরিবেশকদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি হয়েছে।
তেলের দাম বাড়ার আশায় তেল মজুত করে রাখছেন অনেক ব্যবসায়ী। কিছু দিন ধরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানকে পরস্পরকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। তেলের দাম আরও বাড়বে সম্ভাবনায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন তারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের যে দাম বেড়েছে বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভৃতির কারণে দাম বাড়লে তার প্রভাব দেশের বাজারে হয়তো পড়ছে। কিন্তু এখন তেল নিয়ে যে অস্থিরতা চলছে, তা সরবরাহ শৃঙ্খলের কারসাজি বলেই প্রতীয়মান। ভোজ্যতেল আমদানিকারক বাজারজাতকারী প্রভাবশালী কিন্তু সরকারের চেয়ে শক্তিধর নয়। সরকার কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে দাপট দেখাতে পারবে না।
সাধারণত ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন, সরিষা, পাম, সূর্যমুখী, রাইস ব্র্যানসহ বাজারে বিভিন্ন তেল পাওয়া গেলেও সহজলভ্য ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সয়াবিন তেল। আবার সীমিত আয়ের মানুষ বাধ্য হয়েই সবচেয়ে কম দামি ভোজ্যতেল ব্যবহার করে। অথচ এ পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজির কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
আয় কম, সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। নিজেদের রান্নায় সাশ্রয়ের কথা ভাবলেও চাইলেই তেলের ব্যবহার কমিয়ে ফেলা যাচ্ছে না। কৃত্রিম সংকটে যাদেরই সংশ্লেষ রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা আস্কারা পেলে সুযোগ পেলেই ঘোঁট পাকাবে। সরকারের উচিত হবে নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিত করা।

Discussion about this post