মসলা, পশুখাদ্যসহ বেশ কয়েকটি পণ্য রপ্তানির আগে জীবাণুমুক্ত করতে হয়। কিন্তু দেড় বছর ধরে এ সেবা বন্ধ রয়েছে। ‘পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবায় ধীরগতি, বাধাগ্রস্ত রপ্তানি’ শীর্ষক প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে।
জানা যায়, পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবা না পাওয়ায় মসলা, পশুখাদ্য ও নানা ধরনের চিকিৎসাসামগ্রীর রপ্তানি কমে গেছে। এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করে রপ্তানি করতে হয়। কিন্তু এ সেবা প্রদানকারী সরকারি একটি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর। বৈশ্বিক কভিড মহামারির পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে এ বিষয়ে কঠোর হয় উন্নত দেশগুলো। এসব পণ্য ও সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় গামা তেজস্ক্রিয়তা (গামা রেডিয়েশন)। সাভারের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন ইনস্টিটিউট অব রেডিয়েশন অ্যান্ড পলিমার টেকনোলজিতে (আইআরপিটি) ২০০৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক এ সেবা চালু করেছিল সরকার। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে এই কেন্দ্র। তাই বিকল্প হিসেবে ইনস্টিটিউট অব ফুড অ্যান্ড রেডিয়েশন বায়োলজি (আইএফআরবি) এ সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু আইআরপিটির চেয়ে আইএফআরবির সক্ষমতা কম। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের সেবা পেতে দেরি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতে। এতে মসলা, পশুখাদ্য রপ্তানিকারক কিছু প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।
পণ্য জীবাণুমুক্ত করার সেবা খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং অন্যান্য পণ্যের গুণমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগজীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পণ্য জীবাণু মুক্তকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে সহজে বোঝা যাবে এটি কেন করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য জীবাণুমুক্ত না করলে, সেগুলো দূষিত হতে পারে এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধারণ করতে পারে। এটি মানুষের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে। চিকিৎসা সরঞ্জাম, যেমন- সিরিঞ্জ, গ্লাভস এবং অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা না হলে, সেগুলো থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যেহেতু আমরা পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিয়ে থাকি, প্রযোজ্য সব পণ্যে এটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা আবশ্যক। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস রপ্তানি বাণিজ্য। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রপ্তানি বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা বাধা। এ জন্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এ বাণিজ্য হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে কমবেশি ৭৬০টি পণ্য রপ্তানি হয়। এগুলোর যেসব ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক, তা সঠিকভাবে করতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয়ও বাড়বে।

Discussion about this post