নিজস্ব প্রতিবেদক : একসময় ছিলেন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা। এরপর ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী হন। পরে পুঁজিবাজারে কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েন। এ অপরাধে তার শাস্তি হয়েছিল। এরপর তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইড লিমিটেডের ভবন নির্মাণে ঠিকাদারির কাজ নেন। সর্বশেষ গত ২০২৪ সালে ফাইন ফুডের পরিচালকও হন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সূত্রে জানা যায়, বিএসইসি ২০২১ সালের ১৯ জুলাই ৭৮৫তম সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় একমি পেস্টিসাইড লিমিটেডকে। অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দামে তিন কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করার সুযোগ দেয়া হয় কোম্পানিটিকে। এ আইপিও টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে নতুন কারখানা ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা বানানোর জন্য পুঁজিবাজারে বিতর্কিত বিনিয়োগকারী ও কারসাজিতে জড়িত বিশ্বজিৎ দাশকে পুরো ১০ কোটি টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে বিশ্বজিৎ দাশের মালিকানাধীন বন্ধন এন্টারপ্রাইজকে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং কোয়ান্টাম ইন্টারন্যাশনালকে সাত কোটি ৭৬ লাখ ৪৯ হাজার ১০৫ টাকা। এ ১০ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয়ের হিসাব সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও আইপিও ইউটিলাইজেশন রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়নি। অথচ গত বছরে ২৪ জুন কমিশনের তদন্ত টিম সেই ভবন নির্মাণে কোনো কার্যক্রম দেখতে পাইনি। আইপিওর টাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কথা বলা হলেও গত চার বছরে এ ভবন নির্মাণের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
গত ২০২৪ সালে হঠাৎ করে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ফাইন ফুড লিমিটেড তাদের নতুন দুজন পরিচালকের নাম ঘোষণা করে। এর মধ্যে একজন বিশ্বজিৎ দাশ। তবে তার শেয়ারহোল্ডিং পজিশন উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ের ফাইন ফুড লিমিটেডের কোম্পানির সচিব সোহেল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।
অপরদিকে একাধিক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ২০১৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্বজিৎ দাশের বিও তহবিল উত্তোলন ও স্থানান্তর এবং লিংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ারসমূহ স্থানান্তর বন্ধ করা হয়। কমিশনের ৬৯৬তম সভায় তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এম. খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির (ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কো. লি., ভিএফএস থ্রেড ডাইং লি., আইপিডিসি ফাইন্যান্স লি., এসএস স্টিল, ইনটেক লি., সায়হাম টেক্সটাইলস লি., সায়হাম কটন মিলস লি., রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি., মন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লি., মন্নু জুট স্টাফলারস লি., আইসিবি এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লি.) শেয়ার মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের পূর্ব-প্রাপ্তির ভিত্তিতে লেনদেন, বাজার কারসাজি, সিরিজ অব ট্রেডিং, আচরণবিধি ভঙ্গ, অতিরিক্ত ঋণ প্রদান, অটো ক্লাইন্ট ট্রেড, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, শর্ট সেলিং, সার্কুলার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সিকিউরিটিজ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা পরিপালনে ব্যত্যয় ও প্রমাণ পায়। ফলে বিশ্বজিৎ দাশ ও তার স্ত্রীর সব বিও লেনদে
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইন ফুডসের পরিচালক বিশ্বজিৎ দাশ ও একমি পেস্টিসাইড লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক উভয়ই সিনহা ফুডসের পরিচালক। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে; যা রিলেটেড পার্টি ট্রানজেকশনের মধ্যে পড়ে। আবার উভয়ই ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ঋণখেলাপি। খেলাপি মামলার আসামিও। উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হলেও বিশ্বজিৎ দাশ একমি পেস্টিসাইডের ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি কাজ নেয়; যা বিধি সম্মত না। আবার চার বছরেরও ভবন নির্মাণ করতে পারেনি। কিন্তু পুরো টাকা তুলে নিয়ে গেছে; যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। অথচ কমিশন কোনো শাস্তি প্রদান করেনি। এভাবে আইপিওর টাকা কোম্পানি ও বিতর্কিত ব্যক্তি ভুয়া তথ্য দিয়ে লুটপাট করছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ দাশের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের সাড়া দেননি।

Discussion about this post