দেশের অন্যতম গর্বের প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ প্রতিষ্ঠানের অনেক সুনাম রয়েছে। আরইবির অধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) মাধ্যমে সারা পল্লী এলাকা আলোকিত করে আরইবি সারা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে। কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগেও আরইবি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যোগ্যতা থাকলে অর্থ ও তদবির ছাড়া এখানে যে কোনো পদে চাকরি পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির কেনাকাটাতেও বড় কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ নেই। সেই প্রতিষ্ঠান নিয়ে তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্র। হাসিনা সরকারের পতন হলেও আরইবি ও পিবিএসের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। এ নিয়ে শেয়ার বিজে আসছে তিন পর্বের ধারাবাহিক। আজ যাচ্ছে ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্ব
মীর আনিস : পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। গত ২০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আরইবির অধীনে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) রয়েছে। এর মধ্যে ১০ সমিতির বার্ষিক মুনাফা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। আর এর প্রতি নজর পড়েছিল হাসিনা সরকারের পছন্দের ব্যবসায়ী গ্রুপ সামিটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ সরকারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মিলে এই লাখো কোটি টাকা মূল্যের ১০ সমিতি ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়ার জন্যই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যবহার করে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল বলে শেয়ার বিজের অনুুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা পিবিএস-১ মুনাফা করে ৫৩১ কোটি টাকা।
নারায়ণগঞ্জ পিবিএস-১-এর মুনাফা ৪৮২ কোটি টাকা, গাজীপুর পিবিএস ১ মুনাফা ৪৫৫ কোটি টাকা, ঢাকা পিবিএস ৩-এর মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা, ময়মনসিংহ পিবিএস ২-এর মুনাফা ২৮১ কোটি টাকা, নারায়নগঞ্জ পিবিএস ২-এর মুনাফা ২৭০ কোটি টাকা, নরসিংদী পিবিএস ১-এর মুনাফা ২৪২ কোটি টাকা, গাজীপুর পিবিএস ২-এর মুনাফা ১৩৭ কোটি টাকা, ঢাকা পিবিএস ৪-এর মুনাফা ১২৭ কোটি টাকা ও মানিকগঞ্জ পিবিএসের মুনাফা ৩৯ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান শেয়ার বিজকে বলেন, ষড়যন্ত্র নিয়ে কথা বলতে চাই না। সংকট সমাধানে নানাভাবে কাজ করছি। সমাধান হবে। পল্লী বিদ্যুতের সমস্যাগুলোর সমাধানে আমরা দুটি কমিটি করেছিলাম। তাদের জমা দেয়া প্রতিবেদনে তিন হাজার কর্মীর চাকরি পুনর্বহালের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে থেকে আমরা প্রথম পর্যায়ে এক হাজার কর্মীর চাকরি পুনর্বহালের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এমন সময়েই কেন গণছুটির কর্মসূচিতে যেতে হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আরইবির ৮০টি সমিতির মধ্যে ১২টি লাভজনক, দুটি ব্রেক-ইভেনে। আর ৬৬টি সমিতি চলে সাবসিডি দিয়ে। সামিট-বিপু গং সংকট তৈরি করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে লোকসানি সমিতিগুলো আরইবির অধীনে রেখে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবির সাবেক এক চেয়ারম্যান শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংক সেক্টরের মতো আরইবিকে খেয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। জুলাই বিপ্লব না হলে আরইবি ধ্বংস হয়ে যেত।
তিনি বলেন, সামিট গ্রুপ অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। সরকারি সুবিধা নিয়েও বছর শেষে ৫০০ কোটি টাকার মুনাফা করতে পারে কি না সন্দেহ। আরইবির ১০ সমিতির মূল্য লাখ কোটি টাকার ওপরে। এগুলো তাদের হাতে গেলে দেশের মানুষকে শোষণ করে তারা বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করতে পারত। এ কারণে তারা এ ষড়যন্ত্র করেছিল।
আরইবি সূত্র জানায়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মডেল প্রতিষ্ঠান। গত ৪৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ প্রায় লাখো কোটি টাকা। এ সময়ে ৮৩টি প্রকল্পে সরকার ৬২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো বালিশ কাণ্ড নেই, নেই কোনো অনিয়ম ও বিতর্ক। এসব প্রকল্পের সর্বোচ্চ সফলতার কারণেই সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি পরিবারের ১৩ কোটি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি এ ধরনের অস্থিরতা দ্রুত নিরসন হবে। এ ধরনের কার্যক্রমের কারণে মানুষের দুর্দশা ও ভোগান্তি বাড়ছে। আমরা আশা করব কর্মকর্তারা বিষয়টি অনুধাবন করবেন।
অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করে শেয়ার বিজ। তবে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া সামিট গ্রুপের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অনেকেই দেশের বাইরে থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সামিট গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) মহসেনা হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

Discussion about this post