মীর আনিস : জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা বদরুল আলম জানতেন না। এ মামলার কথা। দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর পালিয়ে গেছেন সৌদি আরবে। তবে তিনি ওমরাহ করার কথা বলে প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াসা।
জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি হয়েও নিয়মিত অফিস করছিলেন ঢাকা ওয়াসার মডস্ জোন ৪-এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল আলম। গত ২৭ জুলাই দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘হত্যা মামলার আসামি হয়েও ঢাকা ওয়াসায় বহাল বদরুল’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদ প্রকাশের পরপরই বিদেশে পালিয়ে যান ওই কর্মকর্তা।
তবে গতকাল বুধবার ঢাকা ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের শেয়ার বিজকে বলেন, বদরুল ওমরাহ করার জন্য ছুটি নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত ছুটির আদেশটি ওয়াসার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।’
অবশ্য পরে গতকাল সারাদিনই ওয়াসার ওয়েবসাইটে ঢোকা যায়নি। এ দিকে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকার পরেও তিনি নিয়মিত অফিস করছিলেন এতদিন। এটা খুবই দুঃখজনক। ঢাকা ওয়াসার কার্যকরী ভূমিকা রাখতে না পারার কারণেই দুর্নীতিবাজ বদরুল দেশত্যাগ করতে পেরেছেন।
গ্রেপ্তার এড়িয়ে বদরুল কীভাবে বিদেশে পাড়ি জমালেন ওয়াসার কর্মকর্তাদের মধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারা তাকে বিদেশে যেতে সাহায্য করেছেন, সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সহযোগীরা এখনও ওয়াসায় বিদ্যমান। তাকসিম এ খানের স্টাফ অফিসার ছিলেন বদরুল আলম। এমডির ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ওয়াসাকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিলেন এই বদরুল আলম। স্টাফ অফিসার থাকাকালীন তিনি দুই হাতে অবৈধ অর্থ কামিয়েছেন। তাকসিম খানের সব অপকর্মের হোতা এই বদরুল। পটপরিবর্তনের পরে তাকসিম খান পালিয়ে গেলেও লেবাস পরিবর্তন করে মডস্ জোন ৪-এ বসেই সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বছরের ২৫ মে তাকে ওএসডি করে হেডকোয়ার্টারে সংযুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, ২ কোটি টাকা দামের গাড়িতে চড়ে চলাফেরা করা বদরুল ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতেন। ওমরাহ হজের নামে ছুটি নিয়ে তিনি নিরাপদে দেশত্যাগ করার আগে করেছেন আরেকটি কাজ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে পিএইচডি করার অনুমতি নিয়েছেন বদরুল। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করেই তিনি এগিয়ে ছিলেন। তিনি জানতেন তাকসিম এ খানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু হলে ফেঁসে যেতে পারেন। এরই মাঝে ফাঁস হয়ে যায় তিনি গুলশান থানার একটি হত্যা মমিলার আসামি। এর পরেই তিনি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান বিদেশে।
পতিত সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যাপক সক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিয়োগ থাকার পরেও ঢাকা ওয়াসা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। জুলাই হত্যার মামলার আসামি শীর্ষক সংবাদ শেয়ার বিজ প্রত্রিকায় প্রকাশের পরেও বদরুলের বিরুদ্ধে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বদরুল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তাকসিম ও বদরুল পালিয়ে গেছেন কিন্তু সিস্টেমটা এখনও রয়ে গেছে। তাকসিম ও বদরুল সিন্ডিকেট ভেঙে ঢাকা ওয়াসাকে নতুনরূপে সাজাতে হবে বলে মনে করেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রকৌশলী বদরুল আলমের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) (আরপিইঅ্যান্ডডি) ড. মনিরুজ্জামানকে ফোন দেয়া হলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে বাড্ডার পারভেজ ব্যাপারী নিহত হন। এ ঘটনায় পারভেজ ব্যাপারীর বাবা সবুজ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামির মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াসার মডস জোন ৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল আলম।
আরও জানা গেছে, গুলশান থানার সিআর মামলায় (নম্বর ৩১৬/২৫ (আমলি আদালত) শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিমসহ অনেকেই আসামি করা হয়। ওই মামলার ১৮১ নম্বর আসামি হলেন ওয়াসার কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল আলম।

Discussion about this post