নিজস্ব প্রতিবেদক : ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের দুই শাখা থেকে মোট ৯ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাবেক দুই চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন আহমেদ ও এস এম মাহফুজুর রহমান, সাবেক সিইও ও এমডি আব্দুস সামাদ আজাদসহ মোট ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন। শিগগিরই দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করবেন।
মামলায় এস আলম গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের ডজনখানেক কর্মকর্তা ও মালিকদেরও আসামি করা হয়েছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ঋণ মঞ্জুরি পত্রের শর্ত ভঙ্গ করে সহ-জামানত বৃদ্ধি না করা, অনুমোদনহীন সীমাতিরিক্ত ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ সৃষ্টি করা, প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা বা গ্যারান্টি না নেওয়া, ঋণের তুলনায় খুবই নগণ্য পরিমাণে এফডিআর জমা রাখা, নিয়ম-বহির্ভূত আমদানি করা, নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা আদায় না করা, মর্টগেজকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সহায়ক জামানত নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। জনতা ব্যাংক পিএলসির সাধারণ বিমা ভবন করপোরেট শাখা ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ওই ঋণের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালকসহ অন্যান্য ৩২ জনের বিরুদ্ধে এক হাজার ১৫২ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ১০৭ টাকা আত্মসাতের প্রথম মামলা। এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে দুই হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৮ টাকা আত্মসাতে দ্বিতীয় মামলা। এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অন্য ৩২ জনের বিরুদ্ধে দুই হাজার তিন কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৩০৮ টাকা আত্মসাতে তৃতীয় মামলা। এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে দুই হাজার ২৯৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ টাকা আত্মসাতে চতুর্থ মামলা। এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালকসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে এক হাজার ৯৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৪ টাকা আত্মসাতে পঞ্চম মামলা।
গত ৭ ডিসেম্বর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে এক হাজার ৯৬৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনতা ব্যাংকের সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুদক।
উল্লেখ্য, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ, অনুমোদনহীন সীমাতিরিক্ত ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড সুবিধা সৃষ্টি, প্রয়োজনীয় গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ গ্রহণ, তুলনামূলক অল্প এফডিআর সংরক্ষণ, নিজস্ব গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করে নির্দেশনা ভঙ্গ, নির্ধারিত সময়ে ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, মর্টগেজকৃত সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন, কম-সহায়ক জামানত গ্রহণসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও আত্মসাৎ করে।
প্রিন্ট করুন




Discussion about this post