শেয়ার বিজ ডেস্ক : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও দ্রুজদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা তারে অস্ত্রশস্ত্রে আঘাত হানার নির্শে দেন।
সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শেটির সরকারি বাহিনীর ওপর গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা ওই এলাকাটিকে অসামরিক এলাকা হিসেবে রেখে দেয়ার ও স্থানীয় সংখ্যালঘু দ্রুজদের রক্ষার প্রত্যয় জানিয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী হস্তক্ষেপ করলে তাদের সঙ্গে দ্রুজদের সংঘাত শুরু হয়।
এই পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে হস্তক্ষেপ করে। গত সোমবার তারা ওই অঞ্চলে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর পর মঙ্গলবার ফের হামলা চালায়।
ঘটনাস্থল থেকে রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, তারা ড্রোনের আওয়াজ এবং দ্রুজ অধ্যুষিত শহর সুইদায় অন্তত চারবার হামলা চালানোর শব্দ শুনেছেন, পরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্যাংককে টেনে নিয়ে যেতে দেখেছেন। টানা গুলি ছোড়ার শব্দের পাশাপাশি মাটিতে তিনটি মৃতহে পড়ে থাকতেও দেখেছেন।
ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা ইসরায়েলের সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। এখানে সংঘাত বৃদ্ধিতে সিরিয়ার শাসক হিসেবে শারা যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তা তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত উন্নতি হতে থাকা সম্পর্ক শারাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। কিন্তু এসব সহিংসতা সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন শারা সরকার নিয়ে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিরাজমান অবিশ্বাসকে সামনে এনেছে। মার্চে সংখ্যালঘু শিয়া আলওয়াতিদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে এ অবিশ্বাস আরও গভীর হয়েছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সুইদায় ওই হামলা ও তার ফলাফলের জন্য ইসরায়েল পুরোপুরি দায়ী বলে গণ্য করছে তারা। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি দেশের সব নাগরিককে সুরক্ষার প্রত্যয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বেশ কিছু সিরীয় সেনা ও বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যে কেউ লঙ্ঘন বা অপব্যবহার করেছে, এমনটি প্রমাণ হলে পদমর্যাদা বা অবস্থান নির্বিশেষে রাষ্ট্র তারে বিরুদ্ধে আইনি পক্ষেপ নেবে।’
সিরিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানিয়েছেন, ‘শান্তি ও সংহতির দিকে এগিয়ে যেতে’ যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস দেশটির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা বন্ধ করতে বলেছে। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল জানিয়েছে তারা গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সিরিয়ায় হামলা বন্ধ করেছে।
দ্রুজদের রক্ষা করার অজুহাতে এর আগেও বেশ কয়েকবার সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এবার প্রভাবশালী দ্রুজ শেখ হিকমত আল-হাজরি এক বিবৃতিতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তার বর্ণিত ‘বর্বর হামলা’ প্রতিরোধ করার জন্য তার গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের আহ্বান জানানোর পর ইসরায়েল সুইদায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানান, তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সুইদায় ‘সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর’ ওপর ও দ্রুজদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা তারে অস্ত্রশস্ত্রে আঘাত হানার নির্শে দেন।
তারা বলেছেন, ‘ইসরায়েলে আমাদের দ্রুজ নাগরিকদের সঙ্গে সিরিয়ার দ্রুজদের গভীর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সিরিয়ার সরকার তাদের যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে তা ও সিরিয়ার সঙ্গে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অসামরিকীকরণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি আমরা।’

Discussion about this post