শেয়ার বিজ ডেস্ক : মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এক দশকে ৫৪০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৭৩৪ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। মার্কিন সরকারের টেক্সটাইল ও পোশাক অফিস (ওটেক্সা) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সাল নাগাদ বেড়ে ৭৩৪ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এটি একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ৩৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে তুলে ধরে।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতির অভিজ্ঞতা থাকলেও কভিড সংক্রমণের ফলে ২০২০ সালে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে (২০১৯ সালে ৫৯২ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০২০ সালে ৫২২ কোটি মার্কিন ডলার)।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে চোখে পড়ার মতো প্রবৃদ্ধি অর্জনে করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে।
ওটেক্সা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫১৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালের মধ্যে কমে ৭ হাজর ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি দশকের পর দশক ধরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে।
২০১৯ সাল পর্যন্ত এই প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক ছিল। কিন্তু কভিড শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২০ সালে উল্লেখযোগ্য ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে গেছে (২০১৯ সালে ৮ হাজার ৩৭০ কোটি এবং ২০২০ সালে ৬ হাজার ৪০৬ কোটি ডলার)।
কভিড-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলেও অর্থনৈতিক মন্দা ছিল উল্লেখযোগ্য। এমনকি ২০২৪ সালেও ২০১৫ সালের আমদানির চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মার্কিন মন্দার সময় ভোক্তা ব্যয় হ্রাস পোশাক ব্যয়ের ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলে। এতে করে পোশাকের বাজারে প্রভাব ফেলার ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যায়।
মার্কিন খুচরা খাত (শিল্পের ৯৫ শতাংশ) আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। উচ্চ শুল্ক (ট্রাম্পের শাসনামলের আগে গড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ), পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং পোশাক পণ্যের স্বল্প আয়ুষ্কালের মতো চ্যালেঞ্জগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলে কার্যকরভাবে সংযুক্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এদিকে, অনেক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে টপকে শীর্ষস্থান দখলে করেছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানু-মার্চ) চীনের চেয়ে ১৮ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম।
অটেক্সার হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমনটাই উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ২ হাজার ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ। বেইজিং দফায় দফায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভিয়েতনাম ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে চীন রপ্তানি করেছে ৩৬০ কোটির ডলারের তৈরি পোশাক। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত অর্থবছর বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছর এই বাজারে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তার মানে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর সেই গড় বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ডলার।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভারত ১৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর পঞ্চম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি করেছে ১২৩ কোটি ডলারে পণ্য। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ।
এছাড়া, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মেক্সিকো ৬৪ কোটি ডলার, হন্ডুরাস ৪৮, কম্বোডিয়া ৯৩, পাকিস্তান ৫৫ ও কোরিয়া ৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মেক্সিকো ও কোরিয়ার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ করে। যদিও হন্ডুরাসের রপ্তানি কমে গেছে ১০ শতাংশ।

Discussion about this post