বিমা আইন সংশোধনে ‘এক পরিবারের শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি নয়’ মর্মে যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), তা যুগোপযোগী এবং এ খাতে স্বচ্ছতা আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা।
ইতোমধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ ও সর্বসাধারণের মতামত নেয়া শুরু হচ্ছে। এ আইনে পরিবর্তন আনা হলে এবং তা যথারীতি পরিপালিত হলে বিমা খাতের অস্পষ্টতা ও দুর্বলতা দূর হবে এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। আইডিআরএ এত দিন ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের ভূমিকায় ছিল আইন হালনাগাদ কারা হলে আইডিআরএর ক্ষমতাও বাড়বে। বিদ্যমান আইনে কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ আইডিআরএ ভেঙে দিতে পারে না। আইন সংশোধন হলে তা সম্ভব হবে। ফলে আশা করা যায়, এ ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার পরিবর্তন হবে। বিমা আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিমা কোম্পানিকে কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। কোনো পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক বা অন্যের সঙ্গে যৌথভাবে বা উভয়ভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না। এছাড়া শর্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী বিমা কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে কি না, এখন থেকে তা সময়ে সময়ে পরীক্ষা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আইডিআরএ’র তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করে। এর মধ্যে ৩৬টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা। গত ১৪ বছরে ২৬ লাখের বেশি বিমা পলিসি বাতিল হয়েছে। ২০২৪ সালে বিমা দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল ৫৭ শতাংশ, অর্থাৎ ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার দাবির বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এতে প্রতীয়মান হয় বিপুলসংখ্যক সেবাগ্রহীতা যথানিয়মে বিমাসুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দাবি নিষ্পত্তির জন্য কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রিও করতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি কঠোরভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে মেনে চললে পলিসিগ্রাহকরা সুফল পাবেন।
খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবারের সদস্যরা বিমা কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবেন না। এ আইন বিমা কোম্পানিগুলো মেনে চলছে কি না, তা নিশ্চিত হতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত হবে সংশ্লিষ্ট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের আইডিআরএ থেকে ছাড়পত্র নেয়া।
বিমা কোম্পানির মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চাপে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচন করে থাকেন। তার মাধ্যমে দলীয় তহবিলে বড় অঙ্কের অনুদান দিয়ে থাকেন বিমা মালিকরা। কৌশলে তারা নিজেদের অনিয়ম, দুর্নীতি চাপা দিয়ে থাকেন এবং সরকারের কাছ থেকে গ্রাহকের স্বার্থের পরিপন্থি সুবিধা নিয়ে থাকেন। এমন প্রবণতাও রয়েছে। পলিসিগ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেই বিমা আইন সার্থক হবে। তবে বিমাব্যবসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরবে।

Discussion about this post