নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে সাম্প্রতিক সময়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেমন কিছু চাল ও ডালের দাম সামান্য কমেছে, অন্যদিকে মাছ, মাংস ও কিছু সবজির বাজারে আবারও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মোহাম্মদপুরের বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নতুন মৌসুমের আমনের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় চালের বাজারে সামান্য স্বস্তি ফিরেছে। ব্রি‑২৮ ও ব্রি‑২৯ জাতের মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। মিনিকেট চালের দামও কিছুটা কমেছে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট বর্তমানে ৭২ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরু ও উন্নত জাতের চালের দাম এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে।
এদিকে ডালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল। খেসারি ও মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, ছোট মসুর ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং বড় মুগ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিনির্ভরতার কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
অন্যদিকে বৃষ্টির প্রভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, বরবটি ও বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। টমেটো ও শসার দাম কিছুটা কমলেও লাউ, চিচিঙ্গা, কাঁচা লঙ্কা ও কাঁচা পেঁপের দাম এখনও বেশি। তবে কিছু সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব ও দুর্নীতির কারণে সবজির দাম যৌক্তিকভাবে কমছে না।
কারওয়ান বাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা কামরুল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় অতিরিক্ত উৎপাদনও আছে। এর ফলে বাজারে সবজির দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’
মাছ ও মাংসের বাজারেও ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, পুঁটি ও কই মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিতল ও শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং বড় ইলিশের কেজি ২ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে গেছে।
মুরগির বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতিটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় এবং খাসির মাংস ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, যা এখনও সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে রয়েছে।
শান্তিনগর বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী রুবায়া আক্তার বলেন, ‘প্রতিদিন বাজারে গিয়ে মনে হয় সবকিছুর দাম নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে মাংস তো একদমই কষ্টের।’
মসলাজাতীয় পণ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রসুনের দাম কিছুটা কমলেও এখনও প্রতি কেজি ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়, পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, আর আলু ২০ থেকে ৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মজুতদারি রোধ না করা গেলে মসলার বাজার স্থিতিশীল থাকবে না।
সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে ক্রেতারা জানান, পণ্যের দাম যেন প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড গড়ছে। তারা অভিযোগ করেন, বাজারে তদারকির অভাব ও সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত প্রতিযোগিতা গড়ে উঠছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও তা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত নজরদারি, মধ্যস্বত্বভোগী দমন এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি।
বর্তমানে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে মিশ্র প্রবণতা বিরাজ করছে। যেখানে চাল ও ডালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, সেখানে মাছ, মাংস ও সবজির দামে এখনও অস্থিরতা স্পষ্ট। বাজার ব্যবস্থাপনায় গতি আনা না গেলে সামনের দিনগুলোতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।

Discussion about this post