প্রতিনিধি, গোবিপ্রবি : ৫ই আগষ্টের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকলেও স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন অনেকেই। যাদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে যুক্ত ছিলেন নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। ছাত্রদলের কার্যক্রমকে গতিশীল কারার অংশ হিসেবে গত ১৪ মার্চ রাতে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( গোবিপ্রবি) ছাত্রদলের ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সদ্য ঘোষিত এই কমিটিতে সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি সহ পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১৫ জন নেতাকর্মী।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী দুর্জয় শুভ। তিনি ইতিপূর্বে ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের অনুসারী ছিলেন।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিভিন্ন ছবি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে একটি ছবিতে তাকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম সারিতে দাড়িয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।
একই ভাবে সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে পদ পাওয়া মাহমুদুল হাসান রাকিবকে সাম্প্রতিক একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় ছাত্রলীগের ব্যানার ধরে প্রথম সারিতে দাড়িয়ে মিছিল করতে। এছাড়াও তাকে ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে চিনে আসছেন সবাই। সে সময়ে তাকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে নিয়মিত অংশগ্রহন করতে দেখা যায়।
অন্য দিকে সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শাহরিয়ার গালিবকে ৫ই আগস্টের পূর্বে আওয়ামীলীগের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করা ও নেতাদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করতে দেখা গেছে। একইভাবে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেও কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মোঃ ফারুক খন্দকার। ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে সামনের সারিতে দেখা গেছে।
কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শফিকুল ইসলামকে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল ও কর্মসূচিতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে দেখা যায় টুঙ্গিপাড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনান আগমন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটির দাবি নিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে যান।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আরেক নেতা শাহজাহানকে ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যায় এবং পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
একই ভাবে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের কর্মী থেকেও ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন। কমিটিতে সহ সভাপতি হিসেবে পদ পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম জহির, শেখ মেহেদী হাসান সাকিব ও আনোয়ার হোসেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মোঃ সাইফুল্লাহ, মোঃ তৌফিক রহমান আকাশ, মোঃ সাব্বির আহম্মেদ শুভ, কৌশিক মোঃ রাজেল প্রামাণিক, সজীব ঘোষ,অপি সরকার। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা নাহিদুর রহমান সাকিব (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) পেয়েছেন প্রচার সম্পাদকের পদ।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা চন্দ্রনাথ মজুমদারের ডান হাত খেতো মোঃ জুয়েল হোসেন ছাত্রদল নেতাদের সাথে নিয়মিত বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এমনকি দেখা করছেন ছাত্রদল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে।
ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ” আমি ছাত্রদলের সদস্য হওয়ার ফরম পূরণ করেছি। আমি ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিথ্যা লেখালেখি হচ্ছে।”
পূর্বে ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ছাত্রদলের সিনিয়র সভাপতি মাহমুদুল হাসান রাকিব বলেন,”আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন আমাদের ময়মনসিং বিভাগীয় ছাত্র ছাত্র সংসদ এই ক্যাম্পাসে ভালো একটা অবস্থান ছিল। সেসময় আমি ময়মনসিংহ ছাত্র সংসদের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিলাম। তখন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কিছু বড় ভাই ছিল যারা অত্যান্ত প্রভাবশালী এবং ছাত্রলীগের নেতা ছিল। বিভাগীয় সংগঠনে আমার একটি বড় সার্কেল ছিল। প্রথম বর্ষের হওয়ায় বড় ভাইরা মাদকবিরোধী মিছিল বলে আমাদের নিয়ে যায়। মিছিলে এক পর্যায়ে তারা আমাকে সামনে দিয়ে দেয়। আর আমি যদি অরিজিনাল ভাবে ছাত্রলীগ করতাম তাহলে জীবনের রিস্ক নিয়ে গোপালগঞ্জের মতো যায়গায় আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদল করতাম? আমিতো নতুন ছাত্রদল করি না। আমি আওয়ামী লীগের আমল থেকে ছাত্রদলের সাথে যুক্ত আছি।”
ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে সভাপতি দুর্জয় শুভ’র সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সদ্য কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল বিদ্যুৎ বলেন,” আমি কি বলবো। আমার বলার মতো কিছু নেই। আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। “
কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রিয়াজ বলেন, ” গোপালগঞ্জ জেলা একটি আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে আওয়ামী লীগের আমলে কাজ করাই অসম্ভব ছিল। আর আমাদের কর্মীরা সবাইতো অর্থনৈতিক ভাবে সামর্থ্যবান না। তাই তাদেরকে হলে থাকতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে হলে থাকতে হলে বাধ্যতামূলক অনেক সময় ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে হয়েছে। এখানে প্রকাশ্যে কাজ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তারপরও অনেকেই চেষ্টা করেছে কাজ করার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, ” আমরা সদস্যের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছি। আমরা যখন ভোট নিয়েছি তখন কেউ এমন অভিযোগ করেনি। কারোর থেকে কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। ভোটের ফলাফল আমরা প্রতিনিধি দল ঘোষণা করে আসছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক চীন সফর শেষ করে যাচাই বাছাই শেষে কমিটি ঘোষণা করেন। এখন যে অভিযোগ গুলো উঠছে সেই বিষয় গুলো যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ আকারে দেয় সে গুলো আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যাচাই করে দেখবেন। আমাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিষয়টি দেখবেন। “