পাওনার দায়ে নিলামে রয়েল ডেনিম, প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে বিপাকে রূপালী ইন্স্যুরেন্স

জালিয়াতি করে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছে বিতর্কিত কোম্পানি রয়েল ডেনিম। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে কোম্পানিটি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ বিমা কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স। এক দশকেও পাঁচ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার পায়নি কোম্পানিটি। একইভাবে কোনো লভ্যাংশও দেয়নি রয়েল ডেনিম। যে কারণে এই বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্স। দায়-দেনার কারণে চলতি মাসেই রয়েল ডেনিমকে নিলামে তুলছে কুমিল্লা ইপিজেড। সেই খবরও জানেন না রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কথা বলে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে বস্ত্র খাতের বেসরকারি কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেড। চার কোটি তিন লাখ ৩৭ হাজার ৫০০টি প্লেসমেন্ট শেয়ার ৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে নেয় কোম্পানিটি। প্রিমিয়াম ছাড়াই ১০ টাকা দরে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করা হয়।

লাভের আশায় কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু শেয়ার কেনার এক যুগ পরও প্লেসমেন্ট শেয়ার পায়নি কোম্পানিটি। কিংবা কোনো লভ্যাংশও। এ নিয়ে এবার নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্স।

বেসরকারি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান এ ওয়াহার অ্যান্ড কোং সর্বশেষ ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ‘রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট’ শেয়ারের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, রূপালী ইন্স্যুরেন্স বস্ত্র খাতের রয়েল ডেনিমের পাঁচ লাখ শেয়ার কেনার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছে। ১০ টাকা দরে শেয়ার কিনেছে, কিন্তু রয়েল ডেনিম দীর্ঘদিনেও সেই শেয়ার হস্তান্তর করেনি। তাই এ বিষয়ে কোম্পানির দায়িত্বশীল ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির ওই বিনিয়োগের সুফল পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে।

তবে রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’ বলে দাবি করেছেন রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রয়েল ডেনিম নামের কোনো কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। সিএফওর কাছ থেকে জেনে বলতে পারব।’
‘রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ার ও নিলাম বিষয়ে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পি কে রায়কে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তার কাছ থেকেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

পরে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জেহাদুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রয়েল ডেনিমে কোনো বিনিয়োগ আছে কিনাÑআমিও বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বস্ত্র খাতের কোম্পানি রয়েল ডেনিম ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিক্রি করে। রূপালী ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রহিমা হোসাইন, পীযূষ সাহা এবং রয়েল ডেনিমের চেয়ারম্যান এএম সাইদুর রহমান, মীর হাসান আলী, আদনান ইমাম, সাদিয়া পারভীন, আফসারউজ্জামান, মিজানুর রহমান ও দিপালী চৌধুরীসহ ৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে এসব শেয়ার বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ১০ টাকা দরে এ শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। শুধু রূপালী ইন্স্যুরেন্স নয়, কোনো প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীই এখন পর্যন্ত রয়েল ডেনিমের কাছ থেকে কোনো লভ্যাংশ পাননি।

সূত্রগুলো বলছে, পুঁজিবাজারে আসার প্রলোভন দিয়ে শেয়ার বিক্রি করলেও রয়েল ডেনিম ব্যাংক ঋণ ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুতে বিতর্কিত কোম্পানি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পরিপালনের ক্ষমতাও কোম্পানিটির ছিল না। ২০১৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে বেসরকারি দুই সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও সিগমা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে চুক্তির তথ্য প্রকাশ করে রয়েল ডেনিম। আইপিওর মাধ্যমে আরও ৬০ কোটি টাকা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল রয়েল ডেনিম। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পেরে আইপিও থেকে সরে আসে কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রভাবের পর পিছিয়ে পড়ে কোম্পানিটি। যে কারণে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা লাভবান হলেও বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তি শূন্য। বরং তাদের বিনিয়োগই এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বস্ত্র খাতের কোম্পানির রয়েল ডেনিম শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লায় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) রয়েল ডেনিমের কারখানা। কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো ছিল না। লোকসানের কারণে প্রায় চার বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। লোকসানের কারণে শ্রমিক ও ইপিজেডের বকেয়া প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না রয়েল ডেনিম। যে কারণে কোম্পানিটির ওপর নাখোশ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা) গত মাসে রয়েল ডেনিমের কারখানা-অবকাঠামো অন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে নতুন করে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কুমিল্লা ইপিজেড। এজন্য চলতি মাসেই নিলামের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

কুমিল্লা ইপিজডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কুমিল্লা ইপিজেডের কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেডের উৎপাদন গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে শ্রমিকদের প্রায় ছয় মাসের বেতন ও ইপিজেডের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে টারমিনেট করা হয়েছে। নতুন করে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য ইপিজেডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া হয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ডেনিম কাপড়ে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড। বিশ্বে প্রায় পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি ডলারের ডেনিমের বাজার রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য রপ্তানি হয়। তাই ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ারের প্রতি ব্যক্তি-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী বেশি। তাই সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে রয়েল ডেনিম। প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।

রয়েল ডেনিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সাক্ষাতে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এরপর তিনি সাক্ষাৎ করার জন্য কোনো সময় দেননি। বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দেয় মীর কাশেম আলীর পরিবার। সেই শেয়ার কিনে মালিকানায় আসেন বর্তমান চেয়ারম্যান ভিওএসডি নামের একটি এনজিওর চেয়ারম্যান এএম সাইদুর রহমান। এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক একেএম মোস্তাফিজুর রহমানও রয়েল ডেনিমের পরিচালক হন। এরপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে কোম্পানিটি।

পাওনার দায়ে নিলামে রয়েল ডেনিম, প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে বিপাকে রূপালী ইন্স্যুরেন্স

জালিয়াতি করে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করেছে বিতর্কিত কোম্পানি রয়েল ডেনিম। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে কোম্পানিটি। সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিপাকে পড়েছে সাধারণ বিমা কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স। এক দশকেও পাঁচ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার পায়নি কোম্পানিটি। একইভাবে কোনো লভ্যাংশও দেয়নি রয়েল ডেনিম। যে কারণে এই বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্স। দায়-দেনার কারণে চলতি মাসেই রয়েল ডেনিমকে নিলামে তুলছে কুমিল্লা ইপিজেড। সেই খবরও জানেন না রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কথা বলে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে বস্ত্র খাতের বেসরকারি কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেড। চার কোটি তিন লাখ ৩৭ হাজার ৫০০টি প্লেসমেন্ট শেয়ার ৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে নেয় কোম্পানিটি। প্রিমিয়াম ছাড়াই ১০ টাকা দরে এসব প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করা হয়।

লাভের আশায় কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা কোম্পানি রূপালী ইন্স্যুরেন্স। কিন্তু শেয়ার কেনার এক যুগ পরও প্লেসমেন্ট শেয়ার পায়নি কোম্পানিটি। কিংবা কোনো লভ্যাংশও। এ নিয়ে এবার নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রূপালী ইন্স্যুরেন্স।

বেসরকারি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান এ ওয়াহার অ্যান্ড কোং সর্বশেষ ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ‘রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট’ শেয়ারের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, রূপালী ইন্স্যুরেন্স বস্ত্র খাতের রয়েল ডেনিমের পাঁচ লাখ শেয়ার কেনার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছে। ১০ টাকা দরে শেয়ার কিনেছে, কিন্তু রয়েল ডেনিম দীর্ঘদিনেও সেই শেয়ার হস্তান্তর করেনি। তাই এ বিষয়ে কোম্পানির দায়িত্বশীল ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির ওই বিনিয়োগের সুফল পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে।

তবে রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ বিষয়ে ‘কিছু জানেন না’ বলে দাবি করেছেন রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রয়েল ডেনিম নামের কোনো কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। সিএফওর কাছ থেকে জেনে বলতে পারব।’

‘রয়েল ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ার ও নিলাম বিষয়ে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পি কে রায়কে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তার কাছ থেকেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে রূপালী ইন্স্যুরেন্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জেহাদুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রয়েল ডেনিমে কোনো বিনিয়োগ আছে কিনাÑআমিও বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বস্ত্র খাতের কোম্পানি রয়েল ডেনিম ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিক্রি করে। রূপালী ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রহিমা হোসাইন, পীযূষ সাহা এবং রয়েল ডেনিমের চেয়ারম্যান এএম সাইদুর রহমান, মীর হাসান আলী, আদনান ইমাম, সাদিয়া পারভীন, আফসারউজ্জামান, মিজানুর রহমান ও দিপালী চৌধুরীসহ ৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে এসব শেয়ার বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ১০ টাকা দরে এ শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। শুধু রূপালী ইন্স্যুরেন্স নয়, কোনো প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীই এখন পর্যন্ত রয়েল ডেনিমের কাছ থেকে কোনো লভ্যাংশ পাননি।

সূত্রগুলো বলছে, পুঁজিবাজারে আসার প্রলোভন দিয়ে শেয়ার বিক্রি করলেও রয়েল ডেনিম ব্যাংক ঋণ ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুতে বিতর্কিত কোম্পানি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পরিপালনের ক্ষমতাও কোম্পানিটির ছিল না। ২০১৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে বেসরকারি দুই সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও সিগমা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে চুক্তির তথ্য প্রকাশ করে রয়েল ডেনিম। আইপিওর মাধ্যমে আরও ৬০ কোটি টাকা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল রয়েল ডেনিম। কিন্তু শর্ত পূরণ করতে না পেরে আইপিও থেকে সরে আসে কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর প্রভাবের পর পিছিয়ে পড়ে কোম্পানিটি। যে কারণে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা লাভবান হলেও বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তি শূন্য। বরং তাদের বিনিয়োগই এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বস্ত্র খাতের কোম্পানির রয়েল ডেনিম শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লায় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) রয়েল ডেনিমের কারখানা। কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা ভালো ছিল না। লোকসানের কারণে প্রায় চার বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। লোকসানের কারণে শ্রমিক ও ইপিজেডের বকেয়া প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না রয়েল ডেনিম। যে কারণে কোম্পানিটির ওপর নাখোশ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা) গত মাসে রয়েল ডেনিমের কারখানা-অবকাঠামো অন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে নতুন করে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কুমিল্লা ইপিজেড। এজন্য চলতি মাসেই নিলামের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

কুমিল্লা ইপিজডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কুমিল্লা ইপিজেডের কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেডের উৎপাদন গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে শ্রমিকদের প্রায় ছয় মাসের বেতন ও ইপিজেডের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে টারমিনেট করা হয়েছে। নতুন করে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য ইপিজেডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া হয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ডেনিম কাপড়ে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড। বিশ্বে প্রায় পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি ডলারের ডেনিমের বাজার রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য রপ্তানি হয়। তাই ডেনিমের প্লেসমেন্ট শেয়ারের প্রতি ব্যক্তি-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী বেশি। তাই সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে রয়েল ডেনিম। প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।

রয়েল ডেনিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সাক্ষাতে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এরপর তিনি সাক্ষাৎ করার জন্য কোনো সময় দেননি। বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দেয় মীর কাশেম আলীর পরিবার। সেই শেয়ার কিনে মালিকানায় আসেন বর্তমান চেয়ারম্যান ভিওএসডি নামের একটি এনজিওর চেয়ারম্যান এএম সাইদুর রহমান। এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক একেএম মোস্তাফিজুর রহমানও রয়েল ডেনিমের পরিচালক হন। এরপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে কোম্পানিটি।