রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ ও বাজার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ স্থগিত হচ্ছে মর্মে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। রপ্তানিমুখী ৯৫৭টি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২৫ শতাংশের রপ্তানির গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। অধিকাংশই পোশাক রপ্তানি করে। সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য, ঢাকার সাভার এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান চলতি সপ্তাহে তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে জাহাজীকরণের (শিপমেন্ট) প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত রোববার সকালে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ না করতে নির্দেশনা পায় কারখানাটি। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা আসলে বাড়তি শুল্কের লোকসান মেটাতে মূল্যছাড় চাইছেন। আরও কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশের পণ্য সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা পেয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। গত বুধবার নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন  তিনি। তিনি বিশ্বের সব আমদানিকারক দেশের ওপর গড়ে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। পাশাপাশি বেশ কিছু দেশের জন্য বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানে যথাক্রমে ২৬ ও ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। চীনে পাল্টা শুল্কসহ মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাজার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫৯ কোটি ডলারের পণ্যের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ১৮ শতাংশ তৈরি পোশাক। তাছাড়া ক্যাপ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হয়।

প্রকাশিত খবর জানা যায়, মার্কিন ক্রেতারা কয়েক দিন ধরে জানতে চাচ্ছিলেন আমাদের সরকার পাল্টা শুল্ক নিয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠির অনুলিপি আমাদের রপ্তানিকারকরা ওই দেশের ক্রেতাদের পাঠাতে শুরু করেছেন। এতে ক্রেতারা সাময়িকভাবে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হবেন বলে আমরা মনে করি।

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় ক্রেতা দেশে তাই শুল্কবাধা কমিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যহাত রাখতে হবে। এর বাইরে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং আমদানিনির্ভরতা যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তা কমিয়ে আনতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে সেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার করার প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সফর বিনিময় এবং আলোচনার মাধ্যমে এ সুবিধা কাজে লাগানো যেতে পারে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে দূরত্ব বা জটিলতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।