ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প

লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও গ্রাহক পায়নি চট্টগ্রাম ওয়াসা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ওয়াসা বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় স্থাপন করে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল বোয়ালখালী, আনোরায়া, কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলায় আবাসিক ও কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। কিন্তু প্রায় দিগুণ সময়ে ও অতিরিক্ত ব্যয়ে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও পর্যাপ্ত গ্রাহক না পাওয়ায় প্রকল্প চালু নিয়ে সংশয়ে রয়েছে ওয়াসা। প্রকল্প পরিচালক বলেন আমরা ডিএলপি পর্যন্ত দেখব। এর মধ্যে গ্রাহক না পেলে পানি শহরের দিকে নিয়ে আসব।
জানা যায়, জ্যৈষ্ঠপুরায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গাজুড়ে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার। আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহক এবং কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপুলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে পানি সরবরাহ করা হবে এই প্রকল্প থেকে।

ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোট বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে ওয়াসার। আর ২ কোটি লিটার দেয়ার কথা বোয়ালখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও পটিয়ার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে। তবে প্রকল্পের শুরুতেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের দেশি-বিদেশি শিল্পজোন ও কারখানাগুলোর প্রায় সবগুলোই সুপেয় পানি নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব শিল্পজোন ও কারখানা কর্তৃপক্ষকে পানির সংযোগ নেয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করেও এখন পর্যন্ত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা (ড্যাপ) ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। অপরদিকে এখন অবধি আবাসিক সংযোগের গ্রাহক পেয়ে প্রায় এক হাজারের মতো। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ সংযোগের মিটার স্থাপন করার হয়েছে। অর্থাৎ মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ শতাংশের কম।
চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন শুরুতে ইপিজেড কর্তৃপক্ষগুলো চিঠি দিয়ে নিজেদের পানির চাহিদার কথা জানালেও এখন আর যোগাযোগ করছে না। এ প্রকল্পের প্রথম সংযোগ দেয়ার কথা ছিল কর্ণফুলীর দক্ষিণপাড়ের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে। কিন্তু এখন তারা আগ্রহ না দেখাতে সেখানে সংযোগ দেয়া যায়নি।

প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। এখন সংযোগ লাইনের কাজ চলছে। প্রকল্পের শুরুতে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিইউএফএল, ড্যাপ, কাফকো শিল্পাঞ্চল ও পটিয়া ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাগুলো পানির চাহিদার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিইউএফএল ও ড্যাপ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান পানির জন্য যোগাযোগ করেনি। অন্যদিকে বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র এক হাজারের মতো সংযোগ স্থাপন করা গেছে। ওখানকার মানুষ ও স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করছে। এ কারণে তারাও এখন ওয়াসার পানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমরা ডিএলপি (ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড) পর্যন্ত দেখব। এর মধ্যে পর্যপ্ত গ্রাহক না পেলে আমরা পানি শহরের দিকে নিয়ে আসব। কারণ শহরে এখনও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় দাতা সংস্থা কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) চট্টগ্রামের পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। ওই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ওয়াসা। কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩১ সাল নাগাদ ওই অঞ্চলে পানির চাহিদা নির্ধারণ করা হয় দৈনিক ছয় কোটি লিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের শুরুতে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় পড়ায় তিন বছর আটকে যায় প্রকল্পটি। পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় এটি। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। প্রকল্প শুরুর পাঁচ বছর পর এসে প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।