মো. রাহাতুল ইসলাম : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসির চলতি হিসাববছরের ৯ মাসের আর্থিক বিবরণীতে কারসাজি হয়েছে বলে মনে করছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে প্রস্তুত করা এই বিশেষ আর্কি বিবরণীতে নিরীক্ষকের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের আর্থিক বিবরণীতে ‘গুরুত্বের বিষয়ে আলোকপাত’ শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করেছে। নিরীক্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে প্রতিবেদনকাল এবং হিসাব পদ্ধতির ভিত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি হিসাববছরের ৯ মাসের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে প্রেফারেন্স শেয়ার ও জিরো কুপন বন্ড ইস্যুর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে। এ কারণে এ ধরনের একটি নির্দিষ্ট সময়কালকে ভিত্তি করে প্রস্তুত আর্থিক বিবরণী সাধারণ বিনিয়োগকারী বা অন্যান্য ব্যবহারকারীর জন্য সর্বজনীন বা প্রথাগত আর্থিক বিবরণীর মতো উপযোগী নাও হতে পারে।
নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান সাফ জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের মতামতের কোনো পরিবর্তন হয়নি, অর্থাৎ তারা আর্থিক বিবরণীর সঠিকতা ও নিরীক্ষা মান বজায় থাকার বিষয়ে নিশ্চিত ছিল।
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের এই বিশেষ আর্থিক বিবরণী ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের হিসাবকালকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ৯ মাসের আর্কি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর সঙ্গে একই হিসাবনীতি ও আর্থিক রীতি অনুসরণ করে। এতে পূর্ববর্তী হিসাববছরের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তুলনামূলক তথ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর উপাত্ত, যেটি নিরীক্ষা করেছিল জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কো. (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস)। প্রতিষ্ঠানটি সে সময় একটি মতামত প্রকাশ করেছিল এবং তা প্রকাশের তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর।
তবে ৯ মাসের আর্থিক বিবরণীতে যে তুলনামূলক উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তা আলাদাভাবে নিরীক্ষা বা পর্যালোচনা করা হয়নি। বরং তা পূর্ববর্তী নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী থেকে পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ ও পুনঃসংকলনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে তথ্যগত নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা হলেও এটি পুরোপুরি নতুন নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়নি বলে উল্লেখ রয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।
এদিকে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের এই আর্থিক প্রতিবেদন মূলত কোম্পানির নির্দিষ্ট আর্থিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও মূলধন সংগ্রহের কৌশলগত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রেফারেন্স শেয়ার ও জিরো কুপন বন্ড ইস্যু পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সময়কাল নির্ধারণ করে বিশেষ বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, যেখানে কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। তবে একই সঙ্গে বিশেষ বিবরণীর উপযোগিতা সীমিত থাকতে পারে, যা নিরীক্ষকের মন্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব মো. রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে এক দিন সময় দিন। আমি বিস্তারিত তথ্য জেনে তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।’ পরে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি এবং ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া দেননি।
এদিকে ডিএসই সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ’এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৫০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে তারে পরিসধিত মূলধন ১৭৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং মোট শেয়ারসংখ্যা ১৭ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার ৮৮৬টি। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে চার দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি সবশেষ ২০২৪ সালে বিনিয়োগকারীরে জন্য পাঁচ শতাংশ নগ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

Discussion about this post